বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। রাতে এটা নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত (২২ মে) শনিবার উত্তর আন্দামান সাগর এবং আশেপাশের এলাকায় ওই লঘুচাপ তৈরি হয়। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ইয়াস’।
রোববার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যা ও বিহার উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের খুলনা উপকূলেও এটি আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাতে পারে। এ সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেছেন, আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি, রোববার সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তখন সেটির কেন্দ্র, গতি বা কোনদিকে যাচ্ছে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। নিম্নচাপে পরিণত হলে ২৫ বা ২৬ তারিখে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান।
নিম্নচাপটি দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা আমাদের জন্য নতুন নয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ মনিটরিংসহ জরুরি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা রয়েছে। সেইসঙ্গে প্রকৌশলীদের কাছে আক্রান্তদের জন্য মাস্ক, স্যালাইনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়ে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, জরুরি ভিত্তিতে লোকবল নিশ্চিত করাসহ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ স্টেশন ত্যাগ করতে পারবে না। কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫১৭ আশ্রয় কেন্দ্র। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ঘূণিঝড়ের সময় করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় ৩ লাখ লোকের থাকাসহ গবাদিপশুও রাখা যাবে। একই সাথে এসব আশ্রয় কেন্দেরাখা হয়ে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্কসহ পর্যাপ্ত পানি ও সেনিটেশনের ব্যবস্থা। জেলা সদরসহ জেলার ৯টি উপজেলাসহ পুলিশ, মোংলা বন্দর কর্তপক্ষ, কোস্টাগার্ড, নৌবাহিনী, রেডক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জরুরী সেবা দিতে কন্টোল রুম খুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, অরেগনসহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে ভারী তুষারপাত হয়েছে। তুষারপাতের কারণে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন পার করছে। বাতিল করা হয়েছে হাজার হাজার ফ্লাইট। আবার কয়েক হাজার ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। কিছু প্রধান সড়কেও চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার তুষারপাতের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ায় বৃষ্টি ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত কয়েক দশকের মধ্যে এই অঞ্চলে সবচেয়ে খারাপ মাত্রার তুষারপাত শুর হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় এখন হাঁটু পর্যন্ত বরফ। টেলিভিশনে আবহাওয়ার সংবাদ উপস্থাপকদের সেই পথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।
এপির খবর, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় ভারী তুষারপাত ও বৃষ্টি হয়েছে। মিশিগান অঙ্গরাজ্যেও তাপমাত্রা হিমাঙ্কে। সেখানে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।
মিশিগানের প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি অন্ধকারে নিমজ্জিত। প্রধান সড়ক, মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। উড়োজাহাজ চলাচলে বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। ফ্লাইটঅ্যাওয়ার ডটকম বলেছে, গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০-এর বেশি ফ্লাইটের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ১৭ হাজারের বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা সতর্কতা জারি করে বলেছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় আজ শনিবারও তুষারপাত হবে। সিয়েরা নেভাদা ও ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত তুষার পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
মিশিগানে ৮ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা অন্ধকারে রয়েছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ সচল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংযোগকারী প্রধান সড়কগুলো তুষারপাতের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। কখন এগুলো চলাচলের উপযোগী হবে, তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে বিদ্যুতের লাইনগুলো নিচে নেমে এসেছে। এতে ক্যালিফোর্নিয়ার এক লাখের বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। অরেগন অঙ্গরাজ্যেও তুষারপাত হয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সামনের মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে আশংকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই যুদ্ধের কারণে দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি আশংকা করছেন, শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে রফতানি স্বাভাবিক না হলে বিশ্ব দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।
রাশিয়ার হামলার কারণে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এসব বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ সূর্যমুখী তেল, গম ও ভুট্টা রফতানি হতো। এগুলো বন্ধ হয়ে পড়ায় এখন বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাপক কমেছে এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী এসব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
জাতিসংঘের হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যপণ্যের দাম ইতোমধ্যেই সারাবিশ্বে অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। নিউইয়র্কে গতকাল বুধবার মিস্টার গুতেরেস বলেন, খাদ্য সংকটের কারণে কোটি কোটি মানুষ অপুষ্টি, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে। সবাই এক সাথে কাজ করলে এ মূহুর্তে বিশ্বে যথেষ্ট খাদ্য আছে। কিন্তু যদি এ সংকটের সুরাহা না হয়, তাহলে সামনের মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের খাদ্যশস্য স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা ছাড়া খাদ্য সংকটের কার্যকর কোনো সমাধান নেই। একই ভাবে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া ও বেলারুশের সারেরও বিকল্প নেই।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে তার যোগাযোগ আছে যাতে করে খাদ্য রফতানি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। তিনি এমন সময় এমন মন্তব্য করলেন যখন বিশ্ব ব্যাংক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ১২ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের যত গম উৎপন্ন করে তার ৩০ ভাগ উৎপাদন করে থাকে। যুদ্ধের আগে ইউক্রেন ৪৫ মিলিয়ন টন খাদ্য শস্য প্রতি মাসে রপ্তানি করতো। কিন্তু রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সব রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে এবং জাতিসংঘের হিসেবে ২০ মিলিয়ন টন ভুট্টা এখনো সেখানে আটকা পড়ে আছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা