ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
https://www.msprotidin.com website logo

ইসলামী পুনর্জাগরণে শাহ্ আবদুল হান্নান


ফাহমিদ-উর-রহমান, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
মঙ্গলবার, ০৪ জুন, ২০২৪, ০৫:০১
ইসলামী পুনর্জাগরণে শাহ্ আবদুল হান্নান

ফাইল ছবি: শাহ্ আবদুল হান্নান

    
বিশ শতকের শেষার্ধ থেকে দুনিয়াজুড়ে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদ একটি বড় ঘটনা হয়ে ওঠে। এটি দ্রুত মিডিয়ার শিরোনাম হয় এবং এটিকে ভিত্তি করে প্রচুর বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন চলে। মুসলিম জগতের দীর্ঘ ঔপনিবেশিকতা তার মুসলিম আত্মপরিচয়কে সংশয়াপন্ন করে তুলেছিল। এই পুনর্জাগরণবাদ বিস্মৃত পরিচয়কে খুঁজে বের করে এবং ব্যক্তি ও জনপরিসরে ইসলামী পরিচয়কে বুনিয়াদ করে নতুন এক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মাত্রা সৃষ্টি করে। এই নতুন মাত্রা আধুনিক ইসলামের গতিশীলতা ও নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের শাহ্ আবদুল হান্নান এরকম একজন চিন্তক পুরুষ, যার মধ্যে আমরা এই নতুন ভাবনার স্ফুরণ দেখি।

ব্যক্তিজীবনে একজন উচ্চপদাধিকারী আমলা হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের ওপর তার গভীর পড়াশোনা, ইজতেহাদি মন, আধুনিক জগতের প্রেক্ষিতে ইসলামকে বোঝাপড়ার কৌশল এবং নানামুখী সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে তার প্রাণবন্ত ও সজীব অংশগ্রহণ তাকে বাংলাদেশের ইসলামী ভাবজগতের নেতৃস্থানীয় পুরুষে পরিণত করেছে।

ইসলামী পুনর্জাগরণবাদের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতির বিকাশ। ইসলামী অর্থনীতি বলতে এর তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক- দু’টি দিকই বোঝায়। গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশে ইসলামী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিস্তার ঘটেছে। এ সময় মুসলিম অর্থনীতিবিদরা ইসলামী শিক্ষার আলোকে ইসলামী অর্থনীতির একটি কাঠামোগত রূপ দেন। এটি জ্ঞানজগতে ইসলামী অর্থনীতি হিসেবে চালু হয়ে যায়। ইসলামী অর্থনীতি বিকাশের প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবে নেতৃত্বেরও উত্থান ঘটেছে, যারা একই সাথে তাত্ত্বিক ও সক্রিয় কর্মী। এ ক্ষেত্রে খুরশিদ আহমদ, উমর ছাপরা প্রমুখ খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইসলামী অর্থনীতির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিকাশে শাহ্ আবদুল হান্নান অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। অ্যাকাডেমিয়া ও সরকারি বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অবস্থান করে তিনি ইসলামী কাঠামোর মধ্যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও চর্চার একটি অনুসরণীয় মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তাকে বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির জনকও বলা যায়।

ইসলাম অর্থনীতিকে মূল্যবোধকেন্দ্রিক হওয়ার ওপর জোর দেয়। ধনতন্ত্রের অবাধ স্বাধীনতা এবং সমাজতন্ত্রের সামাজিক মালিকানার ধারণা দুনিয়ায় অনেক ভালো কাজ করলেও বাস্তবে অর্থনৈতিক অসমতা দূর করতে পারেনি। বর্তমান পৃথিবীর অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ অনেকটা ধনতন্ত্রের হাতে। কিন্তু ধনতন্ত্র দুনিয়াজুড়ে প্রতিষ্ঠা করেছে একধরনের সোস্যাল ডারউইনিজম। ধনতন্ত্রের মাধ্যমে এখানে ধারণা দেয়া হয়েছে অর্থনীতিতেও ন্যাচারাল সিলেকশন হবে। শুধু যোগ্যরাই বেঁচে থাকবে, গরিবদের স্থান থাকলেও সেটি খুব প্রান্তিক অবস্থান হবে। এখানে এথিকসের কোনো জায়গা নেই। শাহ্ আবদুল হান্নান তাই সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আর তা-ই যদি হয় তাহলে কোন যুক্তিতে আমরা দরিদ্রের জন্য কাজ করব? দারিদ্র্য কেন দূর করব? কেন আমরা নিরক্ষরতা দূর করব? কেন আমরা বঞ্চিত জনগণের জন্য কাজ করব? এসবই তো মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কিত।’

আসলে ধনতন্ত্র হলো একটি মূল্যবোধহীন অর্থনীতি। ঠিক এই প্রেক্ষিতে ইসলামী অর্থনীতির ধারণাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ এটি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন। এর তিনটি ভিত্তি : তাওহিদ, খেলাফত ও ইনসাফ। তাওহিদ মানে হচ্ছে সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি এবং এটি কোনো তাৎপর্যহীন ঘটনা নয়। সবমানুষের গুরুত্ব রয়েছে এবং প্রত্যেককে গুরুত্ব দিতে হবে। খেলাফত মানে হচ্ছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ আল্লাহর খলিফা। সে কোনো দৈবাৎ ঘটনা নয় বা জন্মগত অপরাধী নয়। এই নীতির ভিত্তিতে সব মানুষ সমান। সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। এই সমতার বৈশিষ্ট্য বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। এটি খেলাফতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। মানুষ সম্পদের আমানতদার। সে মূল মালিক নয়। সে নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে না। সম্পদকে ব্যবহার করতে হবে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী। এটি খেলাফতের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য।

ইনসাফের দাবি হচ্ছে সব মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করতে হবে। সবার জন্য সম্মানজনক আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনভাবে অর্থনীতিকে সাজাতে হবে, যাতে সবার আয়ের ব্যবস্থা হয়।

ইসলামী অর্থনীতির কতকগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যগুলোই এটিকে ধনতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে পৃথক চরিত্র দিয়েছে। শাহ্ আবদুল হান্নানের ভাষায়, ‘ইসলামী অর্থনীতির ইসলামিত্ব হচ্ছে তার মূল্যবোধ এবং তার প্রয়োগনীতিতে। অর্থনীতি বিষয়ে কয়েকটি প্রধান ইসলামী মূলনীতি হচ্ছে- সুদ নিষিদ্ধকরণ, সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি, দুস্থদের জন্য সামাজিক ব্যবস্থা (জাকাত), ব্যবসায় ও জীবিকা অনুসন্ধানের অধিকার, অর্থ ও সম্পদ জমাকরণের বিরুদ্ধে শক্ত মনোভাব, ইসলামের মিরাসি ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির প্রতিরোধ।’

শাহ্ আবদুল হান্নান মনে করতেন, ইসলামের জাকাত-ব্যবস্থা দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে জাকাত চালু আছে সেটি দিয়ে তা করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কেন্দ্রীভূতভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টনের ব্যবস্থা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। অথবা কোনো সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেও করা যেতে পারে। জাকাত এমনভাবে দিতে হবে, যাতে জাকাত গ্রহীতা একেবারে স্বাবলম্বী হয়ে যায়। এই যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার বাস্তব প্রয়োগ ব্যতীত দারিদ্র্য দূর করা কঠিন কাজ।

ইসলামী কাঠামোর মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণের আরেকটি টুলস হলো ওয়াক্ফ ব্যবস্থা। মুসলিম জগতে দীর্ঘ কলোনিয়াল শাসন ওয়াক্ফ ব্যবস্থাকে রীতিমতো তছনছ করে দিয়েছে। আল্লাহর পথে দান-খয়রাত ইসলামী নৈতিকতার অংশ। এ কারণে মুসলমানরা কিছু সম্পদ দরিদ্রদের জন্য সবসময় ওয়াক্ফ করতেন। ওয়াক্ফের আয় থেকে মসজিদ, মাদরাসা, সরাইখানা চলত, এমনকি দরিদ্র ছাত্রদের ব্যয় নির্বাহ করা হতো। শাহ্ আবদুল হান্নান ওয়াক্ফ ব্যবস্থাকে পুনর্জীবিত করার পক্ষপাতী ছিলেন, যাতে মুসলিম সমাজে দারিদ্র্যের অবসান হয়।

ব্যাংকিং আধুনিক অর্থনীতির প্রাণ। কারণ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই অর্থের আদান-প্রদান হয় এবং এর মাধ্যমে অর্থনীতি গড়ে ওঠে। বিশ্বব্যাংকের চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর রিফর্ম প্রোগ্রামের (এফএসআরপি) প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পালনকালে তার তত্ত্বাবধানে নিম্নোক্ত সংস্কারগুলো গৃহীত হয়- ঋণ শ্রেণিকরণের আন্তর্জাতিক নীতি গ্রহণ; আন্তর্জাতিক নিয়মের রিস্ক ওয়েটেড ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি পদ্ধতি গ্রহণ; ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো চালুকরণ; লেন্ডিং রিস্ক অ্যানালাইসিস বা ক্রেডিট রিস্ক অ্যানালাইসিস চালুকরণ ইত্যাদি। এসব নীতিমালার সংযোজন ব্যাংক তথা আর্থিক খাতকে বিশ্বমানে উত্তরণে ভূমিকা রাখে। ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) প্রবর্তন হয়।

শাহ্ আবদুল হান্নান ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি মনে করতেন, ইসলামী ব্যাংকিং যদি জাতীয় ব্যাংকিং পদ্ধতি হয় তাহলে সুদ উঠে যাবে। ইসলামের সামাজিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্যাবলি প্রতিষ্ঠা করা তখন সহজ হবে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের চাহিদা পূরণ করা। চাহিদা পূরণ না করতে পারলে সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আর ইনসাফ না থাকলে সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে না, সঙ্ঘাতমুক্তিও ঘটবে না। বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে শাহ্ আবদুল হান্নানের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে এটিকে তিনি তাত্ত্বিক জায়গা থেকে প্রায়োগিক স্তরে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সফলতার পশ্চাতে তার কারিশমা একটি বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে। তিনি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান আইন সংস্কার করেন। ফলে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হয়।

শাহ্ আবদুল হান্নানের একটি অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল সমাজে নারীর অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ছিলেন নারীর মুক্তি, অধিকার ও স্বাধীনতার একজন প্রবল কণ্ঠস্বর। ইসলামী কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তিনি মনে করতেন, ইসলামী কাঠামোর মধ্যে নারীকে যে অধিকার দেয়া হয়েছে তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবে সেই অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত হয়। বাস্তব ও তত্ত্বের এই ফারাক তাকে ব্যথিত করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, আমাদের জীবনে ইসলামী মূল্যবোধের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার ফলে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মুসলিম জীবনে ইসলামী মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন যাতে কি না নারীর ওপর জুলুমের অবসান ঘটে।

সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে নানা কথা শোনা যায় বটে, কিন্তু আমাদের সমাজে নারীরা যে অনেকসময় অত্যাচারের শিকার হয়- এটিও মিথ্যা নয়। পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, মোহরানা না পাওয়া এগুলো যে অহরহই ঘটে তাও অস্বীকার করা যাবে না। এর ফলে অনেকের মধ্যে একটি ধারণা হয়- এ অবস্থার জন্য মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে ইসলামই দায়ী। ইসলামের কারণেই নারীদের ছোট করে দেখা হয় এবং তারা অধিকারবঞ্চিত হয়। ফলাফল যা হয় তা আরো মারাত্মক। অনেকেই ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করে পশ্চিমা নারীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

শাহ্ আবদুল হান্নানের কথা হলো, ইসলামী কাঠামোর মধ্যে নারীর যে অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তা কথায় নয়, কাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলামের মধ্যে তার নিজের মতো করে নারীর ক্ষমতায়নের একটি ব্যবস্থা আছে। ইসলামী ফ্রেমওয়ার্কে নারীর যে অধিকার দেয়া হয়েছে তা ইসলামের আবির্ভাবকালীন সময়ের চেয়ে চিন্তাভাবনার দিক দিয়ে অনেক অগ্রসর ছিল। শাহ্ আবদুল হান্নান দেখান, এটি আজকালকার পরিপ্রেক্ষিতেও অনেক অগ্রসর চিন্তা। এমনকি পশ্চিমের চেয়েও। তাহলে মুসলিম সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে কেন?

শাহ্ আবদুল হান্নান লিখেছেন, ‘ধর্ম মানুষের মধ্যে নিঃস্বার্থপরতা ও অন্যকে অগ্রাধিকার প্রদানের যে মানসিকতা সৃষ্টি করে তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়। এ দেশের নারীরা যে অধিকারবঞ্চিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে তা ধর্মের কারণে নয়; বরং ধর্ম থেকে আমাদের বিচ্যুতির কারণে। আমাদের মধ্যে সৃষ্ট স্বার্থপরতা, নীতিহীনতা ও ভোগস্পৃহাই এর জন্য দায়ী।’ তাহলে এর প্রতিকার কী? শাহ্ আবদুল হান্নানের ভাষায়- ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, তাদেরকে সে অধিকার ভোগ করার সুযোগ তথা সামাজিক অবস্থা তৈরি করে দেয়া।’

শুধু লেখালেখির মাধ্যমে নয়, নানারকম সামাজিক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে নারী প্রশ্নটিকে তিনি সবসময় সজাগ করে তুলেছেন। নারীর হিজাবের অধিকারের প্রশ্নে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, নারী অপহরণ, যৌতুক, পর্নোগ্রাফি প্রভৃতির বিরুদ্ধে তার আপসহীন ভূমিকা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শুধু তাই নয়, এসব প্রশ্নে তিনি সমাজের ইন্দ্রিয়কেই জাগানোর চেষ্টা করেননি, তিনি এর বিপক্ষে রীতিমতো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও চেষ্টা করেছেন। তিনি জানতেন, সমাজ না জাগলে এ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।

চিন্তাগতভাবে শাহ্ আবদুল হান্নান ছিলেন মধ্যপন্থী। ইসলামের নামে তিনি কোনো রকমের বাড়াবাড়িকে সমর্থন করেননি। এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি ইসলামকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে আধুনিক সভ্যতার প্রচুর অগ্রগতি ও অর্জনের সামনে তিনি ইসলামকে নতুন করে পাঠ করেছেন। একালে ইসলামের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামো কী রকম হবে তা নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা করেছেন। কুরআন ও হাদিসের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে তিনি একালের মুখোমুখি হয়েছেন এবং ইসলামের পুনর্ব্যাখ্যা করেছেন।

শাহ্ আবদুল হান্নান মনে করতেন, চরমপন্থা ইসলামকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু ইসলামের স্বভাব মধ্যপন্থা, চরমপন্থা নয়। চরমপন্থা ক্ষুদ্র বিষয়কে বৃহৎ করে তোলে। চরমপন্থীরা কারো কথা শুনতে চায় না। সমন্বয় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সমন্বয় তারাই করে, যারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। চরমপন্থা উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেয় না। আর মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ না হলে সে কী করে জাগবে?

শাহ্ আবদুল হান্নান মুসলিম জগতে একধরনের ভাববিপ্লবের পক্ষপাতী ছিলেন। বহুদিন ধরে মুসলিম জগতে বুদ্ধিবৃত্তির খরা চলছে। এই খরা নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার সৃষ্টিশীলতার টগবগে আগুনকে মোকাবেলা করা যাবে না। শাহ্ আবদুল হান্নান চেয়েছিলেন মুসলিম জগতে চিন্তার চাষাবাদ হোক, গবেষণার ফুল ফুটুক, সৃষ্টিশীলতার আগুন টগবগিয়ে উঠুক। মুসলিম জগতে একটি বর্ধনশীল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে উঠুক। তিনি তার কৃতি ও সাধনার ভেতর দিয়ে বারবার আমাদের এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

লেখক : ফাহমিদ-উর-রহমান

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

কবির গভীর অভিমান


ফেসবুক ডেস্ক:
মঙ্গলবার, ০১ জুন, ২০২১, ১১:৫৮
কবির গভীর অভিমান

ফাইল ছবি। কাজী নজরুল ইসলাম

 
কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিদ্রাহী কবি বিশেষণটি না দিলে মন ভরে না। এই মহান কবিকে আমরা এখনও বিদ্রোহী বলে জানি এবং সেভাবেই জানতে ও ভাবতে আমরা বেশি পছন্দ করি। যৌবনের কবিও বলা হয়। যে কবি যৌবনের তার বিদ্রোহী হতে কোনো বাধা নেই। একালের কবিও তো সে কথাই বলেন। ‘এখন যৌবন যার , যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' " (হেলাল হাফিজ)। যুদ্ধ আর বিদ্রোহের মধ্যে ব্যবধান আছে। সব যুদ্ধ বিদ্রোহ নয়। পক্ষান্তরে বিদ্রোহ থেকে যুদ্ধ উৎপন্ন না হয়েই পারে না। সে যুদ্ধ  হতে পারে সশস্ত্র , হতে পারে সামাজিক প্রতিরোধ কিংবা সাংস্কৃতিক লড়াই। বাংলাদেশের মানুষ তো বটেই, গোটা উপমহাদেশের জনগণ দু’শ বছর লড়াই করেছেন্। বুকের ভেতর দ্রোহের আগুন জ্বেলে তারা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। সেই সংগ্রামের বিচিত্রতা ও বহুমাত্রিকতার ইতিহাস কমবেশি আমরা সবাই জানি। দুই শতাব্দির লালিত দ্রোহে ভাষা দিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

সেই সংগ্রাম আবারও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি পাকিস্তানের তেইশ বছরের দুঃশাসনের মধ্যে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে  নজরুলের কবিতা ও গান আমাদের সাহস জুগিয়েছে, প্রাণিত করেছে যুদ্ধের ময়দানে, অবরূদ্ধ জনপদে। তবু, বিদ্রোহ বা যুদ্ধ প্রৌঢ়- প্রাচীনের জন্য সহজ নয়। নজরুল যখন বলেন, আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙঙ্খল!’Ñতখন বিচলিতবোধ করেন শান্তিপ্রিয় কোনো কোনো প্রৌঢ়বোদ্ধা।  কিন্তু ক্ষুব্ধ তরুণ বলেন, এই তো  আমার প্রাণের কথা। অতঃপর বিদ্রোহ আর যৌবনকে সমান্তরাল বলে ভেবে নেয়া যায় বৈ কি!
 
নিশ্চয়ই কবি  জানতেন যে, লোকে তাঁকে বিদ্রোহী বলেই বেশি ভালবাসেন। তাসত্তে¡ও মাঝে মাঝে মনেহয়, তিনি নিজেও এই অভিধায় বিব্রতবোধ করতেন। সে জন্যে তিনি কৈফিয়ৎ দিতেও কুণ্ঠিত হননি। চির-বিদ্রোহী কবিতায় তিনি বলছেন,
‘বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার গভীর অভিমান।
তোমার ধরার দুঃখ কেন
আমায় নিত্য কাঁদায় হেন?
বিশৃঙ্খল সৃষ্টি তোমার, তাই তো কাঁদে আমার প্রাণ!
বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার গভীর অভিমান।’
বোঝাই যায়, অভিমানী কবির এই কৈফিয়ৎ কোনো মানুষের কাছে নয়, এই কৈফিয়ৎ ;নাকি জিজ্ঞাসা তাঁর স্রষ্টার কাছে । অন্তর্যামীর প্রতি কতটা গভীর ভালবাসার দাবি বুকের ভেতর লালন করলে পরে এমন উদ্ধত ভাষাভঙ্গি প্রয়োগ করা যায়, তা সহজেই অনুমেয়।  এ-ও একধরণের সমর্পণ। রবীন্দ্রনাথও সমর্পিত কবি। কিন্তু দু’জনের প্রকাশভঙ্গি আলাদা। একজন রাগী , অভিমান ক্ষুব্ধ, আরেকজন বিনীত, মার্জিত প্রার্থনায় আনত।

নজরুল বিদ্রোহী। তিনি দার্শনিকও বটে। তিনি যখন বলেন, আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? Ñ তখন চট করে মাথায় প্রশ্ন এসে যায়, সকাল হলে মানুষ জাগে নাকি মানুষ জাগলে সকাল হয়? প্রশ্নটি খুবই জটিল নিঃসন্দেহে। একজন কিশোর পাঠক যখন কবিতাটি পাঠ করে, তখন তার মনে কোনো প্রশ্নের উদ্রেক নাও হতে পারে। তার কাছে এ শুধু একটি ভাললাগার পদ্য। কিন্তু প্রাপ্তমনস্ক মানুষ আপনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারেন। এই জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজতে গেলেই আমরা মুখোমুখি হই কঠিনতর জীবন সত্যের। রাত পোহালে , সূর্য উঠলেই সকাল হয়। ভোরের আলো ফোটে। আলো ফুটলেও সব সময় কিন্তু সে আলোতে জীবনের অন্ধকার ঘুচে যায় না। মানুষ জাগলে, তার দীর্ঘ, দীর্ঘতর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আলোকমন্ডিত হয় জীবন। কাল হতে কালান্তরের, দেশ হতে দেশান্তরের ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার প্রমাণ রয়েছে। সেই সত্যেরই প্রতিধ্বনি করেন বিদ্রোহী কবি।  উষার দুয়ারে আঘাত হেনে তিমির রাত টুটাবার আহবান শুনি আমরা তাঁর  কণ্ঠে। তিনি ভীত- সন্ত্রস্ত মানুষকে শোনান অভয়ের বাণী, মাভৈঃ,মাভৈঃ। তাঁর অভয় মন্ত্র;
ওরে    যে যায় যাক সে, তুই শুধু বল ‘আমার হয়নি লয়’।
বল    আমি আছি, আমি পুরুষোত্তম, আমি চির দুর্জয়!
বল    নাহি ভয়, নাহি ভয়,
বল    মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়।’

এ হলো আত্মশক্তি উদ্বোধনের গান। ব্যক্তি বা  জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার নিজের মনের শক্তি। ইংরেজিতে একে বলা হয়, পাওয়ার অব পজেটিভিটি। মানুষ যতদিন নিজেকে ভয় থেকে মুক্ত করতে না পারে, ততদিন তার মুক্তি নাই। ভয়ের হাত ধরেই আসে পরাজয়। ভয় থেকে পলায়ন করার সুযোগ নেই বরং জয় করতে হয়, জয় করতে হবে। একে জয় না করে স্বাধীনতাও আসে না। আবার সমাজে ভয় কায়েম রেখে স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় না। রুজভেল্টের ফোর ফ্রিডম তত্তে¡ও বলা হয়েছে একই কথা। নজরুল তাই সবসময় প্রাসঙ্গিক এবং সর্বজনীন। তিনি দূত মানবমুক্তির।

 

--------- ফাইজুস সালেহীন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ লেখক-সাংবাদিক ফাউন্ডেশন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

করোনায় (১৯মে) মৃত্যু ৩৭, শনাক্ত ১৬০৮ এবং সুস্থ ৯২৩


স্বাস্থ্য ডেস্ক:
বুধবার, ১৯ মে, ২০২১, ০৫:৩২
করোনাভাইরাসের সর্বশেষ তথ্য

করোনাভাইরাস


       
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ২৪৮ জন।
 
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ১৬০৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৭ জন।
 
আজ বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আরও জানানো হয়, গত ১ দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৯২৩ জন করোনারোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ জন।

উল্লেখ্য, এদিন মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ হাজার ৫২৮ জনের।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook