মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল দক্ষিণবাংলার ঐতিহ্যবাহী ভ্রমণ মাধ্যম লঞ্চ সার্ভিসও। গত রবিবার সরকারের ঘোষিত নীতিমালার অনুযায়ী ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি করে আসন সংখ্যা সীমিত রেখে চলাচল শুরু করেছে নৌযানসহ গণপরিবহন।
গত রবিবার সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজন লঞ্চযোগে গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে তবে যাত্রীদের চাপ ছিল কিছুটা কম। বিভিন্ন টার্মিনালে ঘুরে আজ দেখা গিয়েছে সকালে চাঁদপুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে ছিল না তেমন ভীড়। তবে যে লঞ্চগুলো ঢাকায় ফিরছে সেগুলোতে মোটামুটি যাত্রীদের চাপ দেখা গিয়েছে। আজ দুপুর ১২.৩০ টায় ছেড়ে যাওয়া বিলাশবহুল এমভি ঈগল-২ মোটামুটি যাত্রী নিয়েই ছেড়ে গেছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। এর আগে ১১.৪৫ এ ছেড়ে যাওয়া এমভি ইমাম হাসান লঞ্চে বেশ ভীড় লক্ষ্য করা গিয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাউকেই মাস্ক ছাড়া লঞ্চে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না, উঠলেই লঞ্চস্টাফরা হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করে নিতে বলছেন। তবে লঞ্চের ভিতর তেমন স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মানার বালাই নেই যাত্রীদের মাঝে। অনেকেই আছে ইচ্ছেমতো ঘুরাঘুরি করতেছে, কেউ মাস্ক পড়ে আছে থুতনিতে কেউবা মাস্ক হাতে নিয়ে ঘুরছে। তাদেরকে মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা অধিকাংশই অভিযোগ করে গরমের কারনে মাস্ক মুখে রাখতে তাদের ব্যাপক কস্ট হয়।
৬০% ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ায় এখন চাঁদপুরের সাধারণ ডেকের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা, পূর্বে ছিল ১০০ টাকা। নরসিংহপুর ঈদগাফেরিঘাটের বর্তমান ভাড়া ১৮০ টাকা আগে ভাড়া ছিল ১২০ টাকা।
ভারতের বর্ধিত শুল্কারোপের পেঁয়াজ দেশে আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে অস্থির করে তুলেছে বাজার। গত দু’দিনে আমদানি পর্যায়ে ১০ টাকা এবং খুচরায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত এর মূল্য বাড়ানো হয়। অতিমুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজটি করেছে।
স্থলবন্দরগুলোর কাস্টমসের তথ্য মতে, ভারতের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কোনো পেঁয়াজ এখন পর্যন্ত দেশে প্রবেশ করেনি। মূল্য বৃদ্ধির পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনাজপুরে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অপর দিকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চীন, জাপান, ইরান, মিসর ও তুরস্কসহ যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে চাইলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। সোমবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা বলেছে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ আগস্ট শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যবস্থা হিসাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সংবাদের পরপর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা দেখা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি। বেনাপোলের আমদানিকারক জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক আল মামুন গণমাধ্যমকে জানায়, সবশেষ ভারত থেকে ৩৮ থেকে ৪৬ টাকায় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। বর্ধিত শুল্কারোপের পর পেঁয়াজ আমদানি করলে তার মূল্য পড়বে কেজি প্রতি ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। অথচ পুরোনো আমদানিকৃত পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে শতটাকা কেজি।
প্রশ্ন উঠেছে বাজার মনিটরিং দুর্বল ব্যবস্থা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মনিটরিং দুর্বল না। আসলে খোলা বাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বিষয়টি নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। আমরা কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছি না। আসলে সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন। তবে পেঁয়াজ সেলফলাইফ বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে সমস্যা থাকবে না।
রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যাম বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। যা দুই দিন আগে ৬০-৬৫ টাকা ছিল। বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫ টাকা, যা আগে ৪৫-৫৫ টাকা ছিল।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার দোকানে ১০০ টাকা। গত দুই দিন আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সূত্র: যুগান্তর
আগামীকাল থেকে আবারো নিয়মিত কার্যক্রমে যাচ্ছে গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সরকারের হঠাৎ এ সিদ্ধান্তের ফলে শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটের ফেরিঘাটগুলোতে বেড়েছে ঢাকামুখীদের ভিড়। দৌলতদিয়া ঘাটে মানুষের চাপে ফেরিতে উঠতে পারেনি রোগীবাহীসহ কোনো গাড়ি।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শনিবার বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিটি ফেরিতেই ঢাকামুখী অসংখ্য মানুষ। আছে অনেক মোটরসাইকেলও। আবার শিমুলিয়া হয়ে বাংলাবাজার যাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রীরা। তবে ফেরিতে দক্ষিনাঞ্চলগামী যাত্রীদের চেয়ে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি।
গার্মেন্টসসহ কালখানা খুলতে পারে এমন খবরে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানায়। এদিকে, যানবাহন না পেয়ে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা ঢাকামুখী যাত্রীরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন পায়ে হেঁটে ও ছোট ছোট যানবাহনে করে ভঙ্গে ভেঙ্গে।
এদিকে, ঢাকামুখী মানুষের চাপে ফেরিতে উঠতে পারেনি রোগীবাহী গাড়ি এবং জরুরী পণ্যবাহী যানবাহনও।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের এজিএম (মেরিন) আহম্মদ আলী বলেন, ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে ছোট-বড়-মাঝারী মিলিয়ে মোট ৯টি ফেরি চলাচল করছে। জরুরি ও লকডাউনের আওতার বাইরে থাকা যানবাহন পারাপারে এসব ফেরি সচল রাখা হয়েছে।
লকডাউন বাস্তবায়ন ও ফেরিতে যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণে ঘাটের অভিমুখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবে তা অতিক্রম করতে যাত্রীরা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে পার পাবার চেষ্টা করে।
বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীদেরও প্রচন্ড ভিড় রয়েছে। প্রতিটি ফেরিতেই শতশত ঢাকামুখী মানুষ। আবার শিমুলিয়া হয়ে বাংলাবাজার যাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী অনেক যাত্রী। তবে ফেরিতে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের চেয়ে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় রয়েছে অনেক বেশি।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে জানা যায়, রবিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে উপছে পড়া ভিড়র দেখা গেছে। মানুষের চাপে ফেরিতে উঠতে পারেনি রোগীবাহীসহ কোনো গাড়ি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ঢাকামুখী যাত্রীর সংখ্যা।
ফেরিতে তিল পরিমান জায়গা নেই দাঁড়ানোর মতো। গায়ে গা লাগিয়ে ঠাসাঠাসি করে পার হচ্ছে যাত্রীরা, স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই ফেরিগুলোতে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিক্সা, ভ্যান, অটো, মাহিদ্র, মোটরসাইকলসহ বিভিন্ন ছোট যানে যাত্রীরা আসছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। কেউবা আসছে পায়ে হেটে। পাড়ে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পরছে ফেরিতে। ফলে ফেরি আনলোড করতেও সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ফেরি থেকে নামতে পারছেনা কোনো গাড়ি।