দীর্ঘ প্রায় তিন বছরেও ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারেনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এরই প্রেক্ষিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থীবৃন্দ এক বিশাল মানববন্ধন করেন। আজ ২০শে জুন ২০২২ইং সোমবার সকাল বেলা এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় এনটিআরসিএ ভবনের সামনে, রেড ক্রিসেন্ট বোরাক টাওয়ার, ৩৭/৩/এ ইস্কাটন গার্ডেন রোড, রমনা ঢাকায়। মানববন্ধন শেষে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।
এসময় অনেক পরীক্ষার্থী আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েন। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দীর্ঘ প্রায় তিন বছর যাবৎ অনুষ্ঠিত না হবার জন্য অনেকেই দুঃখ ও কষ্ট প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেন, তাদের বয়স বাড়ছে। তাই পরীক্ষা বিলম্বিত হলে এক সময় দেখা যাবে ভাইভা পরীক্ষা ভালো করার পরও গনবিজ্ঞপ্তি থেকে বাদ পরে যেতে পারেন। এনটিআরসিএ যেন দ্রুত পরীক্ষা নেন তাই সকলকে নিয়ে আজ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উক্ত ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থীবৃন্দ এর মানববন্ধন পরিচালক ও উপস্থাপক মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত খান খাদেম। সাথে ছিলেন প্রচার সম্পাদক কামরুল ইসলাম, সকল নেতাকর্মীসহ অনেক পরীক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
মানববন্ধন শেষে এনটিআরসিএ পরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) তাহসিনুর রহমানের কাছে সরাসরি স্মারকলিপি প্রদান করেছে পরীক্ষার্থীরা। সবার সামনে তিনি সবাইকে আশ্বস্থ করেছেন সম্ভাব্য কোরবানি ঈদের আগে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিঃ ও লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবেন।
তাদের স্মারকলিপিতে ছিল, আমরা ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যাশী। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এদেশের সংবিধানকে চূড়ান্ত আইন মনে করি। আমরা গর্বিত এই ভেবে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব'র কারনে এদেশের শিক্ষাখাত এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। একটি জাতি গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব ''বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)'' এর উপর ন্যস্ত। এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠার পর ১ম থেকে ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ করেছে।
বাংলাদেশে প্রায় ২ লক্ষ বেকারের চাকুরীর সুপারিশ করে তারা স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ২৩শে জানুয়ারি ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০২০ সালের ২৫শে মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং ৭-৮ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাস, লকডাউন ও অন্যান্য কারনে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল করা হলে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া হলেও আমাদের পরীক্ষা নেয়া হয়নি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রিলিমিনারি ও গনবিজ্ঞপ্তির বয়স ৩৫ বছর। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা গত ২২শে আগস্ট ২০২১, ১৬ নভেম্বর ২০২১ এবং ৩০শে মে ২০২২ পর পর ৩ বার স্মারকলিপি প্রদান করি। যদি ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে আরও বিলম্ব হয় তাহলে এক সময় দেখা যাবে ভাইভা পরীক্ষা ভালো করার পরও গনবিজ্ঞপ্তি থেকে বাদ পরে যেতে পারেন। কারন অনেকেই ৩২ বা ৩৩ বছর বয়সে আবেদন করেছিলেন। তাদের বয়স বাড়ছে।
তাই অতি দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান সবাই। এনটিআরসিএ জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত পরীক্ষা গ্রহন করলে এদেশের শিক্ষিত সমাজ জাতি গঠন করার কারিগর হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেফমুবিপ্রবি) কোষাধ্যক্ষ পদে অবসরপ্রাপ্ত (পি আর এল) একজন অতিরিক্ত সচিবকে নিয়োগ দেওয়ায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শুক্রবার (৭মে) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপির মাধ্যমে এ নিন্দা জানানো হয়।
প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান সৃষ্টির স্থান। একজন কোষাধ্যক্ষ ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে সমন্বয়পূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সহ জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান সৃষ্টির নানাবিধ কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন। কাজেই একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদই এই পদের যোগ্য। এই পদে একজন সরকারি কর্মকর্তার নিয়োগদান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর আমলাতন্ত্রের নগ্ন হস্তক্ষেপ।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পিআরএল ভোগরত) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর চাকুরীজীবন শেষ করেছেন। এই নিয়োগাদেশ শিক্ষকসমাজে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এছাড়াও এ প্রতিবাদলিপির মাধ্যমে অবিলম্বে এই নিয়োগাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি।
উল্লেখ্য, গত ৫মে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৭ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী জনাব মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে (অতিরিক্ত সচিব, পি আর এল ভোগরত) বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয়।
দিন শেষে রাত আসে। রাতের অপেক্ষা ফুরায়। আবার রাত শেষে দিন আসে। দিনের অপেক্ষা ফুরায়। মাস ফুরিয়ে নতুন মাস আসে, বছর ফুরিয়ে আসে নতুন বছর। এভাবেই একসময় দেখতে দেখতে আমাদের জীবনটাও ফুরিয়ে যাবে। পাড়ি জমাতে হবে অন্ধকার গহিন কবরের শেষ ঠিকানায়। সময়ের পালা-বদলে পুরনো একটি বছরকে বিদায় জানিয়ে আগমন করেছে নতুন আরেকটি বছর। নতুন বছর ঘিরে নানা জনের নানা ভাবনা থাকে।
এ ক্ষেত্রে একজন মুমিনের ভাবনা হলো, আমার জীবনের মূল্যবান একটি অংশ চলে গেছে। আমি মৃত্যুর আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। কারণ আল্লাহ মানুষকে সুনির্দিষ্ট একটি সময় দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এ সময়ের কোনো হেরফের বা কমবেশি হবে না। যার জন্য যতটুকু সময় নির্ধারিত, ততটুকু ফুরিয়ে গেলেই জীবন শেষ হয়ে মৃত্যুর ডাক এসে যাবে।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন কারও নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কিছুই কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।’ সুরা মুনাফিকুন।
তাই একটি বছরের উপসংহারে দাঁড়িয়ে মুমিনের মানসপটে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে একটি বছর তো আমি শেষ করেছি, কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমাকে এ পৃথিবীতে পাঠালেন যেমনটি তিনি কোরআনে বলেছেন ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।’ সুরা জারিয়াত।
সে পথে আমি কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য জান্নাতের দিকে কতটা এগিয়ে যেতে পেরেছি? এর জন্য পাথেয় সংগ্রহ করেছি কতটুকু? নাকি এখনো উদাসীনতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি?
কোরআনে আল্লাহ এমন লোকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে তাদের কি এখনো সময় হয়নি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে? তারা কি তাদের মতো হবে না, যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। এরপর যখন তাদের ওপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলো, তখন তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেল এবং আজ তাদের অধিকাংশই অবাধ্য।’ সুরা হাদিদ।
অতএব নতুন বছরে একজন মুমিনের কর্তব্য হলো বিগত বছরের ভুলত্রুটি সংশোধন করা এবং সেগুলোর জন্য তওবা করে নতুন বছরে নির্ভুল ও পাপমুক্ত জীবনযাপনের জন্য প্রত্যয়ী হওয়া। পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশের মুখোমুখি হওয়ার আগে পৃথিবীতেই জীবনের হিসাব-নিকাশ করে নেওয়া। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
লেখক: মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম, ইসলামবিষয়ক গবেষক।