আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার লড়াইটা হলো হাড্ডাহাড্ডি। ম্যাচের শুরুতে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরে কলম্বিয়া।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ সমতা থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে খুবই লাকি বলতে গেলে আর্জেন্টিনা। দলটির গোলরক্ষক ইমিলিয়ানো মার্টিনেজ ঠেকিয়ে দেন তিনটি শট। আর তাতেই জয়ের রাস্তা মসৃণ হয় মেসিদের। টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা ফুটবলের ফাইনালে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা।
তার মানে কোপা আমেরিকায় কাঙ্ক্ষিত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল হচ্ছে। আগামী ১০ জুলাই রিও ডি জেনিরোর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দল। ৯ জুলাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে পেরুর।
পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনাল আগে নিশ্চিত করে ব্রাজিল। বুধবার সকালে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা।
দলটির জয়ের নায়ক অবশ্য দুই মার্টিনেজ। ফরোয়ার্ড লতারো মার্টিনেজ ম্যাচে গোল করেন শুরুতে। আর টাইব্রেকারে তিন শট প্রতিহত করে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন মেসি, পেরেদেস ও মার্টিনেজ। গোল মিস করেন ডি পল, দ্বিতীয় শটেই। মেসি নেন প্রথম শট। অন্য দিকে কলম্বিয়ার হয়ে প্রথম শটে গোল করেন কুয়াদ্রাদো। কিন্তু দ্বিতীয় শটেই সানচেজকে বা দিকে ঝাপিয়ে প্রতিপহত করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। তৃতীয় মিনার শটও একই কায়দায় রক্ষা করেন তিনি। চতুর্থ শটে কলম্বিয়ার হয়ে গোল করেন কারদোনো। ব্যবধান তখন ৩-২। পঞ্চম শটে গোল করতে পারলে ব্যবধান হতো ৩-৩। তখন আর্জেন্টিনার প্রয়োজন পড়তো পঞ্চম শট নেয়ার। কিন্তু তার আর দরকার হয়নি। কলম্বিয়ার পঞ্চম শট রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে দারুণ জয়ের স্বাদ দেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
ম্যাচের ৪ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু মার্টিনেজের হেড অল্পের জন্য পোস্ট খুঁজে পায়নি। এর মিনিট তিনেক পরই এগিয়ে যায় স্কালোনি শিবির। ডি বক্সের মধ্যে মেসির সহায়তায় কলম্বিয়ার জাল কাঁপান লতারো মার্টিনেজ। টুর্নামেন্টে মেসির এটি চতুর্থ অ্যাসিস্ট, যা সর্বোচ্চ।
৯ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক ইমিলিয়ানো মার্টিনেজের দক্ষতায় বেঁচে যায় মেসিরা।
৪৪ মিনিটে গোল পেতে পারত আর্জেন্টিনা। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। মেসির নেয়া কর্ণারে গঞ্জালেজের দারুণ হেড খুঁজে পায়নি জাল। অথচ সে মনে করেছিল গোল হয়েছে। কিন্তু ওসপিনো দক্ষতায় অক্ষত থাকে কলম্বিয়ার জাল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মারাত্মক ফাউলের শিকার হন মেসি। ৫০ মিনিটের দিকে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। সেবা নিয়ে আবার খেলতে নামেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ৬১ মিনিটে ম্যাচে ফেরে কলম্বিয়া। নয়নকাড়া গোলে দলকে সমতায় ফেরান লুইস ডিয়াস।
৭৩ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মাঝ মাঠ থেকে ডি মারিয়া একাই বল টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের বক্সে। নিজে শট না নিয়ে পাস দেন সতীর্থকে। কিন্তু পাসে মার্টিনেজ শট নেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ওসপিনা বরাবর। ফিরতি শটে বল উড়িয়ে মারেন ডি মারিয়া। হতাশ আর্জেন্টিনা শিবিরে।
এর তিন মিনিট পর ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা মেসিকে ফাউল করায়। গোলের দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু পারেননি মেসি। ৮০ মিনিটে বক্সের মধ্যে ডি মারিয়ার নিখুঁত পাসে মেসির শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ৮৭ মিনিটে ফ্রি কিকে মেসি খুঁজে পাননি কলম্বিয়ার জাল। শেষ অবধি ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক বলতে গেলে গোলরক্ষক মার্টিনেজ। তিন শট প্রতিহত করে দলকে উপহার দেন ফাইনালের টিকিট।
ম্যাচে আর্জেন্টিনার সাথে সমানতালে লড়েছে কলম্বিয়া। ১৩ শটের মধ্যে আর্জেন্টিনার চারটি ছিল লক্ষ্যে। সেখানে ১৪ শটের মধ্যে চারটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল কলম্বিয়া। বল দখলে আর্জেন্টিনার চেয়ে এগিয়ে ছিল কলম্বিয়া, শতকরা ৫১ ভাগ। আর্জেন্টিনা কর্ণার আদায় করে ৫টি, কলম্বিয়া পায় তিনটি। এই ম্যাচে কলম্বিয়া ফাউল করেছে ২৭টি, আর্জেন্টিনাও কম করেনি, ২০টি।
ক্যাম্প নূ তে গতকাল রবিবার দলগত নজরকাড়া পারফরম্যান্সে লেভান্তেকে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। পুরোটা সময় আধিপত্য করে লা লিগার ম্যাচটি তারা ৩-০ গোলে জিতেছে। মেমফিসের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুক ডি ইয়ং। আর শেষে গিয়ে দল ও সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে ভাসান ফাতি। অসংখ্য সুযোগ নষ্ট না হলে ব্যবধান হতে পারতো অনেক বড়। পুরো ম্যাচে প্রায় ৭০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ২০টি শট নেয় বার্সেলোনা, যার ১২টি ছিল লক্ষ্যে।
আর প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে কোনো শট নিতে না পারা লেভান্তে বিরতির পর ছয়টি শট নেয়, যার দুটি লক্ষ্যে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তিন ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ঘরোয়া লিগে গত দুই রাউন্ডে ড্র করেছিল রোনাল্ড কুমানের দল। ভীষণ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলা বার্সেলোনার ম্যাচের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। শুরুর ১৪ মিনিটেই দুবার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। ষষ্ঠ মিনিটে মেমফিসের সফল স্পট কিকে এগিয়ে যায় দলটি। বাঁদিক থেকে দুই জনের মধ্যে দিয়ে দারুণভাবে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া ডাচ এই ফরোয়ার্ডকে মিডফিল্ডার নেমানিয়া রাদোইয়া ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। চাপ ধরে রেখেই আট মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সেলোনা। এই গোলেও আছে মেমফিসের অবদান।
মাঝমাঠ থেকে তার বাড়ানো বল ধরে বাঁদিক দিয়ে আক্রমণে উঠে ডি-বক্সে পাস বাড়ান সের্জিনো দেস্ত। আর ফাঁকায় বল পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জোরালো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন লুক ডি ইয়ং। বার্সেলোনার জার্সিতে এটা তার প্রথম গোল। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রেখে আরও কয়েকটি নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। কিন্তু বিরতির আগে আর ব্যবধান বাড়েনি। ২২তম মিনিটে মেমফিসের দূরের পোস্টে বাড়ানো ক্রসে পা লাগাতেই পারেননি জেরার্দ পিকে। ৩৬তম মিনিটে সতীর্থের থ্রু বল ডি-বক্সে পেয়ে গোলরক্ষককে কাটালেও শট নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাননি শুরু থেকে দারুণ খেলা মেমফিস। আর ৪২তম মিনিটে ২৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের হেড কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুতে আবারও প্রতিপক্ষের সীমানায় হানা দেন মেমফিস। এবারও তার প্রচেষ্টা দারুণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আইতর ফের্নান্দেস। ৬৫তম মিনিটে আবারও সাবেক লিওঁ ফরোয়ার্ড মেমফিসের শট ঠেকান স্প্যানিশ এই গোলরক্ষক। ৮১তম মিনিটে স্বাগতিক সমর্থকদের দীর্ঘ অপেক্ষার শেষ হয়। চোট কাটিয়ে ফেরা ফাতিকে বদলি নামান কোচ। গত বছরের নভেম্বরের পর এই প্রথম মাঠে নামলেন ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। মাঠে নামার একটু পরই ক্ষিপ্র গতিতে ডি-বক্সে ঢুকে ফাতি প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে পড়ে গেলে পেনাল্টির জোরালো আবেদন ওঠে। রেফারির সাড়া যদিও মেলেনি। অবশেষে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মিলে যায় কাঙ্ক্ষিত গোল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ফাতি।
ছয় ম্যাচে তিনটি করে জয় ও ড্রয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠেছে বার্সেলোনা। এক ম্যাচ বেশি খেলা লেভান্তে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ১৭ নম্বরে। সাত ম্যাচ ১৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ। সেভিয়া ও আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট সমান ১৪ করে; এক ম্যাচ কম খেলা সেভিয়া আছে দুইয়ে। দারুণ এই জয়, সঙ্গে ফাতির দুর্দান্ত ফেরায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ লড়াইয়ের আগে নিশ্চিতভাবেই হারানো আত্মবিশ্বাস অনেকটাই ফিরে পাবে বার্সেলোনা। আগামী বুধবার বেনফিকার মাঠে খেলবে কাতালান ক্লাবটি।
আওয়ামী লীগের দলে অবহেলিত ও ত্যাগী নেতাদের উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘নৌকা মঞ্চ’ নামে সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়।
শনিবার চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবে কাওছার আহম্মেদ বাবলুর সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন, ‘নৌকা মঞ্চ’ সংগঠনের সভাপতি ও সাবেক ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাওছার আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগকে পারিবারিক দলে পরিণত করা হয়েছে। দলে আগমন ঘটেছে হাইব্রিড নেতাদের। বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগে। ফলে মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের তিনি জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচনেও পরিবারের সদস্যদের নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করিয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থনও দেওয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী, নির্যাতিত, পদবঞ্চিত নেতাকর্মীকে নিয়ে ‘নৌকা মঞ্চ’ নামে সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট সংগঠনের সভাপতি কাওছার আহমেদ বাবলু ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। সূত্র: সমকাল