ঢাকা শনিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
https://www.msprotidin.com website logo

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনার টিকা কেবল মারাত্মক অসুস্থতা কমায়


স্বাস্থ্য ডেস্ক:
রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ১১:৪৯
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনার টিকা কেবল মারাত্মক অসুস্থতা কমায়

ফাইল ছবি

ভারতে টিকা দেওয়ার পরও করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা এই ভাইরাসের শরীরে প্রবেশ ঠেকাতে পারে না, এটি শুধু আক্রান্ত রোগীর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি এবং মৃত্যুহার কমায়। শুধু মাস্কই এই ভাইরাস নাক-মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ ঠেকাতে পারে। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা করোনায় একবার আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন তাদের জন্য টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট। খবর হিন্দুস্তান টাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের

ভারতের পাটনা, দিল্লি, চেন্নাইসহ কয়েকটি শহরে গত কয়েক মাসে টিকা গ্রহণের পরও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। দিল্লির শ্রী গঙ্গারাম হাসপাতালের ৩৭ জন ডাক্তার সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। যাদের প্রায় সবাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার দুই ডোজ টিকাই গ্রহণ করেছিলেন।

হায়দরাবাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লক্ষ্মী লাবণ্য আলাপাটি বলেন, দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডিগুলো উন্নত হয় এবং এটি সংক্রমণের জটিলতা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করে। টিকা গ্রহণের পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ৮৫ ভাগ কমে। কিন্তু টিকা ভাইরাসকে শরীরে প্রবেশ করা ঠেকায় না। শুধু মাস্কই এটি করতে সক্ষম। 

দিল্লি সরকারি হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ ডাক্তার বলেন, টিকা করোনার বিরুদ্ধে পূর্ণ নিরাপত্তা সুরক্ষা দেয় না। মাস্ক না-পরলে টিকা গ্রহণকারীর নাক ও মুখের মাধ্যমে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। ফলে অনেকেই টিকা গ্রহণের পর মাস্ক না-পরায় আক্রান্ত হয়েছেন। 

মনে রাখতে হবে, আমাদের সবচেয়ে বড় টিকা হচ্ছে মাস্ক। দিল্লিতে ৫৪ বছরের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ২২ ফেব্রুয়ারি করোনায় স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগে মারা যান। তার ছেলে ধীরাজ বলেন, আমার বাবা ১৭ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন। বাসায় আসার পর থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করেন, তার তাপমাত্রা বেড়ে যায়, দু-তিন দিন পরই তিনি মারা যান। চেন্নাইতে ১৫ মার্চ টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণকারী এক ব্যক্তির ২৯ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় এবং ৩০ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৪ এপ্রিল মারা যান।

সেরে উঠলে এক ডোজ টিকাই যথেষ্ট: করোনায় যারা একবার আক্রান্ত হয়েছেন এবং পরে সেরেও উঠেছেন-কোভিড টিকার একটি ডোজই তাদের জন্য যথেষ্ট। টিকার একটি ডোজ নিলেই করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য তাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গবেষণাটি চালিয়েছে আমেরিকার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের পেন ইনস্টিটিউট অব ইমিউনোলজির বিজ্ঞানীরা। শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স ইমিউনোলজি’তে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। 

গবেষকরা পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪ জন সুস্থ মানুষকে বায়োএনটেক-ফাইজার ও মডার্নার তৈরি ‘মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ)’ কোভিড টিকা দিয়েছিলেন। ৪৪ জনের মধ্যে ১১ জন আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে তারা সবাই সেরে ওঠেন। কীভাবে তাদের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তা বুঝতে গবেষকরা টিকা নেওয়ার আগে ও পরে দুবার করে মোট চারবার ৪৪ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেন।

টিকাও যাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না: এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডা. অ্যান্ড্রু ওলোউইৎজ নিজেকে নিউইয়র্কের মামারোনেকে বাড়ির ভেতর বন্দি করে রেখেছেন। ৬৩ বছর বয়সি এ চিকিৎসক সম্প্রতি করোনার টিকা নিয়েছেন। অবশ্য তাতে ওলোউইৎজের শরীরে কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না। তিনি হচ্ছেন লাখ লাখ আমেরিকানের একজন, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে না। এদের অনেকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা ছাড়া কিংবা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে জন্মেছেন। অন্যরা হয় কোনো রোগে ভুগে কিংবা থেরাপির কারণে তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করেছেন। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঘাটতি নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা এ ব্যক্তিদের অধিকাংশই তাদের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নন। লিউকেমিয়া অ্যান্ড লিম্ফোমা সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. লি গ্রিনবার্গার বলেন, তারা বাইরে হেঁটে বেড়ান, মনে করেন যে তারা নিরাপদ, কিন্তু তেমনটা না-ও হতে পারে। সূত্র: যুগান্তর
 

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

করোনায় (৯আগষ্ট) মৃত্যু ২৪৫, শনাক্ত ১১৪৬৩ এবং সুস্থ ১৪৪১৪


স্বাস্থ্য ডেস্ক: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সোমবার, ০৯ আগষ্ট, ২০২১, ০৬:২৬
করোনায় (৯আগষ্ট) মৃত্যু ২৪৫, শনাক্ত ১১৪৬৩ এবং সুস্থ ১৪৪১৪

করোনাভাইরাস

গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৪৫ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২২ হাজার ৮৯৭ জন।
 
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ১১,৪৬৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৮ জন।
 
আজ সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আরও জানানো হয়, গত ১ দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৪,৪১৪ জন করোনারোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৯ জন।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪২ হাজার ২০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন:
বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১, ১০:১১
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু

ফাইল ফটো:

আজ ১৭ মার্চ, শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু! প্রতি বছর এ দিনটি আমার একান্ত ভাবনার দিন, আনন্দ ও বেদনায় আপ্লুত স্মরণীয় দিন। কেন আনন্দ-বেদনা? নিজের মনে গুঞ্জরিত এ প্রশ্নের উত্তর মনের মধ্যেই আছে। আনন্দ এ জন্য যে, ১৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্ম হয়। বেদনা এ জন্য যে, আপনার কথা ভাবলে গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়কের চরিত্রের করুণ পরিণতির কথা মনে পড়ে যায়। আপনার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তোলা একটি ছবির দিকে তাকিয়ে আমার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। কী অনবদ্য ভঙ্গিতে বসে আছেন আপনি! মুখে পরম তৃপ্তির কোনো রহস্যময় ঈষৎ হাসি ছড়িয়ে আছে। ছবিটির দিকে তাকিয়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কী ভাবছেন আপনি? দেশের কথা? দেশের মানুষের কথা? নাকি অন্য কিছু? আপনার বসার টেবিলের পাশেই আমি তখন দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাবতে পারিনি, পরিচিত বা অপরিচিত কারও তোলা ছবিটি প্রতিটি ১৭ মার্চে আমাকে এভাবে আনন্দ-বেদনায় মগ্ন করে রাখবে।

আপনাকে আমি চিনতাম ও জানতাম স্কুলে ছাত্রাবস্থা থেকে। প্রথম চাক্ষুষ দেখা পাই ১৯৬২ সালে প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত কচি-কাঁচার মেলার এক অনুষ্ঠানে। আপনি মেলার সদস্যদের উদ্দেশে একটি বক্তব্য রেখেছিলেন। ৬০ বছর পরে সে বক্তৃতার কথাগুলো খুব একটা মনে থাকার কথা নয়। ভালোভাবে লেখাপড়া করার জন্য ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য আপনি শিশু-কিশোরকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কচি-কাঁচার মেলার সদস্যরা আপনাকে গার্ড অব অনার দিয়ে নিজেরা গৌরবান্বিত হয়েছে। কচি-কাঁচার মেলার চারজন সদস্য- সদ্যপ্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান, শিল্পী হাশেম খান ও আমি ছিলাম আপনার একান্ত ভক্ত ও অনুরক্ত। দাদাভাই রোকনুজ্জামান খান গর্বভরে বলতেন, ‘কচি-কাঁচার মেলার সদস্যদের কেউ রাজাকার হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকে আত্মদান করেছে’। মুক্তিযুদ্ধকালে দৈনিক ইত্তেফাক ও কচি-কাঁচার আসরের অফিসটিকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আপনার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো ষাটের দশকের মাঝামাঝি পুরানা পল্টনের আওয়ামী লীগ অফিসে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শেখ ফজলুল হক মনি তার হোন্ডার পেছনে আমাকে তুলে আপনার সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে যান। খুব কম সময়ই ছিলাম আপনার সামনে। কিন্তু আমার ক্ষুদ্র জীবনে সেটা ছিল এক মাহেন্দ্রক্ষণ। ওই দিনটির স্মৃতি মনের মণিকোঠায় চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে আছে। আরও অনেক স্মৃতি আছে আমার। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি মুজিবনগর সরকারের তথ্য বিভাগে চাকরিরত ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আমাকে বঙ্গভবনে ডেকে নেন। ওই সময়ের একটি ছোট্ট স্মৃতি আমার খুবই মনে পড়ে। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে দেখতে ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে আমিও ছিলাম। দুদিন পরে বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনে এলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। বঙ্গবন্ধুকে গাড়িতে তুলে দিতে সামরিক সচিব ও আমি করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, মাহবুব! কাল তোমারে দেখেছি!

আমি সবিস্ময়ে বললাম, কোথায় স্যার? তুমি কালকে টেলিভিশনে আসছিলা। বঙ্গবন্ধু বললেন।

কী আশ্চর্য! এটা কি একটা বলার কথা হলো আমার মতো নগণ্য একজন সরকারি কর্মকর্তাকে? সেদিন বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরেছি, এমন ছোটখাটো ঘটনাও দৃষ্টি এড়ায় না তাঁর। এজন্যই তো তিনি বঙ্গবন্ধু!

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ ত্যাগ করে রাষ্ট্রপতি হন। সেদিনই তিনি আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে থাকবা।’ এরপর তাঁর মৃত্যুদিন পর্যন্ত আমি বঙ্গবন্ধুর অধীনে তাঁর সহকারী প্রেস সচিব নিয়োজিত হই। প্রেস সচিব ছিলেন আবদুল তোয়াব খান। ২৫ জানুয়ারি থেকে ওই বছর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় খুব বেশি নয়। কিন্তু ওই সময়টুকু বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমার জীবনের গৌরবগাথা। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে এ সময়ের, যার কিছু ঘটনা আমার ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’ বইয়ে উল্লেখ করেছি। এর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধুর পিতার চল্লিশায় টুুঙ্গিপাড়া যেতে ‘গাজী’ জাহাজে মধ্যরাতে নিজের মাথার বালিশ আমার মাথার তলে দিয়ে দেওয়া, টাঙ্গাইলে ভাসানী সাহেবের বাড়ি থেকে খুলনায় তাঁর ভাই শেখ নাসেরের বাড়িতে যাওয়ার পথে অভুক্ত আমাকে খাবার প্রদানের জন্য হেলিকপ্টারের কর্মকর্তাদের নির্দেশ, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর অনুলেখক হিসেবে কাজ করার সময় একান্ত স্মৃতিচারণা, ১৪ আগস্টে ৩২ নম্বরের বাসায় যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার শেষ কথোপকথন, আরও কত কী!

স্বাধীন বাংলাদেশে আপনার প্রথম জন্মদিন উদযাপনের স্মৃতি চিরকাল মনে থাকবে। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ বিমান ‘রাজহংস’। ভারতরত্ন ইন্দিরা সর্বপ্রথম অবতরণ করলেন। তারপর নামলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং পরে অন্য অতিথিবৃন্দ। বিমানবন্দরে ইন্দিরাকে ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বিকাল ৩টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণ দিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ময়দানের একপাশে নৌকার আকারে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ নামে। বিশাল জনসমুদ্রকে সামনে রেখে ইন্দিরা গান্ধী প্রথম দুই মিনিট বাংলায় বক্তৃতা দেন, পরে বাংলায় দীর্ঘ বক্তৃতাদানে অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে হিন্দিতে বক্তৃতা করলেও কবিগুরুর কবিতার দুটি চরণ আবৃত্তি করেন। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।’

ইন্দিরা গান্ধীকে আমি প্রথম দেখি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডে। বক্তৃতায় মাঝখানে ছেদ পড়ল, দিল্লি থেকে খবর এসেছে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছে। তার পরের ঘটনা তো সবারই জানা। স্বাধীনতার পর এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁর আরাম-আয়েশের জন্য আমাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা ছিল। বঙ্গভবনের একজন অফিসার হিসেবে তখন তাঁকে কাছে থেকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পাই। আরও কাছে থেকে দেখতে পাই ওই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে এবং পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় এসে তিন দিন বঙ্গভবনে ছিলেন তিনি। দেশে ফেরার আগে বঙ্গভবনের অফিসারদের কিছু উপহার দিয়েছিলেন। আমি পেয়েছিলাম ভারতীয় র-সিল্কের একপ্রস্থ কাপড়। পরে তা দিয়ে একটা পাঞ্জাবি তৈরি করাই। সব মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম জন্মদিনটি চিরকালই আমার স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।

আবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। ব্যক্তিগত একটি ঘটনার কথা মনে হলে আমার মন সঙ্কুচিত হয়ে যায়। কথাটা সঙ্গতকারণে আগে কাউকে বলিনি। সেটাও ১৯৭৫ সালের ঘটনা। আমরা হেলিকপ্টারে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যাই। ফেরার পথে আমি চট্টগ্রামে ব্যক্তিগতভাবে দুই দিনের যাত্রাবিরতি করি। চট্টগ্রাম নিউমার্কেট থেকে আমি চাকচিক্যময় একটা স্যুটপিস কিনি। স্যুট বানিয়ে ওটা পরে অফিসে যেতে বঙ্গবন্ধুর সামনে পড়ে যাই। তিনি আমাকে পোশাক সম্পর্কে কিছু না বললেও আমার এক সহকর্মীকে বলেন, অত জমকালো পোশাক যদি কাউকে সাধারণ মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, সেটা কি ঠিক? কথাটা জানার পর পোশাকের বিষয়ে আমি সাবধান হয়ে গিয়েছিলাম। এই একটি ঘটনা ছাড়া বঙ্গবন্ধু আমাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর কখনো ভর্ৎসনা করেননি।

আজ সবচেয়ে মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর শেষ জন্মদিনটির কথা। ১৯৭৫ সালের ১৬ মার্চ আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি তো কচি-কাঁচা! তুমি কাল আমার বাসায় আসবা। আমি যে এক সময়ে শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রথম আহ্বায়ক ছিলাম, কথাটা তিনি জানতেন। এজন্য আমাকে কচি-কাঁচা বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁর জন্মদিনে বিশেষভাবে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। দিনটি বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোরের সঙ্গে কাটাবেন। ছোটদের সান্নিধ্য তিনি যে কতটা ভালোবাসেন, তা সবাই জানে। ১৭ মার্চ সকালবেলা ৩২ নম্বরের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে তিনি শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলেন। এত প্রাণোচ্ছল বোধহয় তাকে খুব কমই দেখেছি। নিজের জন্মদিন বলেই হয়তো তিনি খুশিতে উচ্ছল হয়েছিলেন। আমার বারবার মনে হচ্ছিল, জন্মদিন বলেই কী তিনি ছেলেবেলার কথা মনে করে একেবারে শিশু হয়ে গেছেন?

৩২ নম্বরের বাসায় তখনো তেমন জনসমাগম হয়নি। শেখ কামাল এসে মিষ্টির প্লেট তুলে দিলেন হাতে। জিজ্ঞাসা করলেন, মাহবুব ভাই, নাশতা করেছেন তো? না করে থাকলে আমার সঙ্গে একটু আসেন। আমি জানালাম, নাশতা করেই এসেছি। একটু পরে মন্ত্রী এম কোরবান আলী এলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানালেন। বিগলিত হাসি দিয়েই অভিনন্দনের উত্তর দিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন সকাল বেলায়ই ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার’ ছোটমণিদের নিয়ে এসেছেন দৈনিক বাংলার ‘শাপলা কুঁড়ির আসর’-এর পরিচালক বিমান ভট্টাচার্য। বঙ্গবন্ধু আগত শিশুদের গাল ছুঁয়ে আদর করলেন। তাদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন। পরে অন্যান্য সংগঠনের শিশু-কিশোররাও এলো। ৩২ নম্বরের বাড়ির গেটের বাইরে তখন অগণিত নেতা-কর্মী ও ভক্তদের ভিড়। তারা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে সমবেত হয়েছেন। ভিতরে আসতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছেন, তিনি আগে ছোটদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ দুটি গৌরবময় সময়ের মোহনায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটির দিকে আবার তাকিয়ে দেখছি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে একটি সংবিধানও দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’র আদর্শ মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সে চারটি মূলনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে আজ। বঙ্গবন্ধুর ছবিটির দিকে তাকিয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছে, কী ভাবছেন বঙ্গবন্ধু? দেশের কথা না, দেশের মানুষের কথা? এর বাইরে তাঁর তো কোনো ভাবনা ছিল না। আমার মতে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার পাশাপাশি অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। আমরা কি তা পেরেছি? আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হচ্ছে- ‘আপনি কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?’

লেখক: নির্বাচন কমিশনার, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। উৎস: বাংলাদেশ প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

সর্বশেষ - স্বাস্থ্য