a
File Photo: Corona-virus
ফাইল ছবি
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে, এক দিনে রেকর্ড ৮২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে হাপাতালগুলোতে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তার রাজধানী ঢাকাসহ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সব বয়সের মানুষেরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও আতঙ্কে রয়েছেন শিশুর অভিভাবকরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৫৭ জেলায় রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অসংখ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তবে সব হিসাব হয়তো সরকারের খাতায় আসছে না। বছরের শুরুতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও মে-জুন মাস থেকে ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৭ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এ বছরের এক দিনে সর্বোচ্চ ৮২০ ডেঙ্গু রোগী। এর আগে গত ৪ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
গতকাল শনিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে আইদান হায়দার। সাত বছর বয়সি শিশু আইদান থাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাদিরাবাদ হাউজিংয়ে। শিশুটির অভিভাবক আনিস রহমান জানান, ‘আইদান ও শিশুটিকে দেখভাল করার কাজে নিয়োজিত বিথী (১৫), দুই জনে বাসার ছাদে বৃষ্টিতে গোসল করতে গেলে তাদের ডেঙ্গু মশা কামড় দেয়। এর একদিন পরেই তাদের দুই জনেরই জ্বর আসে। বর্তমানে তারা দুই জনই শিশু হাসপাতালের ১৬ ও ১৭ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। জ্বর সেরেছে, তবে চিকিৎসক বলেছেন, তাদের দুই জনের অবস্থায়ই ক্রিটিক্যাল। আমরা অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’
শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড চতুর্থ তলায় ১০ বছর বয়সি সাজিম ও তার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। সাজিম যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় আবাসিকে থেকে লেখাপড়া করে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পর তার জ্বর আসে। সাজিমের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। জ্বরের সঙ্গে গায়ে র্যাশ দেখা দিলে, ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ান সাজিমের মা। জ্বর না সারায় তারা গত মাসের ২৭ তারিখে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করায় সাজিমকে। শিশুটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাজিমের মা বলেন, ‘ওর বাবা থাকেন সৌদি আরবে, আমি একলা ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে খুব ভয়ে আছি।’
ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক নিশাত জাহান গণমাধ্যমকে জানান, প্রতিদিনই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা ভীড় করছেন। ডেঙ্গুতে শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, চতুর্থ তলায় আমাদের ডেঙ্গু ওয়ার্ড, তবে সেখানে বেড ফাঁকা না থাকায় হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি রয়েছে। তিনি বলেন, এই মাত্র একটি শিশু এসেছে শক সিনড্রোম নিয়ে। জ্বর সেরে যাওয়ার তিন দিন পরে হাসপাতালে এসেছে, এখন তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। তিনি বলেন, এবার জ্বর ছাড়াও পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি নিয়ে হাসপাতালে আসছে শিশুরা, আসার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, সব হাসপাতাল রেডি রয়েছে। যে কেউ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে, তার চিকিৎসা দিতে হবে। সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সবাইকে সেবা নিতে হবে। আমি বলব, সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে। নিজবাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখারও পরামর্শ দেন।
ফাইল ছবি
ইসরায়েলের ওপর ইরানের সম্ভাব্য হামলার জবাবে উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের এলাকায় অবস্থিত মার্কিন কোনও ঘাঁটি ব্যবহার না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, উপসাগরীয় এলাকার মার্কিন মিত্ররা তাদের ভূখণ্ডে থাকা মার্কিন ঘাঁটি থেকে ইরান কিংবা ইরানের মিত্রদের ওপর হামলা না চালাতে আহ্বান জানিয়েছে।
উত্তেজনা তীব্র হতে থাকায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত তেল-সমৃদ্ধ উপদ্বীপজুড়ে মোতায়েন হাজার হাজার মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতির অনুমোদন-সংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলো নিয়েও বর্তমানে প্রশ্ন তুলছে। ইরানের ওপর প্রতিশোধমূলক মার্কিন হামলার ক্ষেত্রে এসব উপসাগরীয় দেশ তাদের আকাশসীমা দিয়ে মার্কিন বিমান উড্ডয়ন প্রতিরোধ করার পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।
উপসাগরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে বিনিয়োগ করছে। এসব ঘাঁটি ইরানের খুব কাছে হওয়ায় এগুলো থেকে সবচেয়ে সহজে ইরানে হামলা চালাতে পারবে আমেরিকা।
কিন্তু এ ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোর অনীহা বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তুতি জটিল করে তুলছে। বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মনে করেন যে ইসরায়েলের ওপর ইরান অতি দ্রুত সময়ে হামলা চালাতে পারে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট মনিটরকে বলেন, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে ইরানের প্রত্যাঘাত আসন্ন। ইরান তার ভূখণ্ড থেকে সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে। দ্বিতীয় বিকল্প হল- তারা তাদের প্রক্সিদের দিয়ে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাতে পারে। এক্ষেত্রে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হুথি এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
তৃতীয় বিকল্প হতে পারে দুটির সমন্বয়ে হামলা। হুথিরা ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন আশঙ্কা করছে, বহুমুখী হামলা হলে এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলি দূতাবাসে হামলা চালাতে পারে, কিংবা পশ্চিম তীর বা গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর হামলা চালাতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আশ্বাস দিয়েছেন ইসরায়েলি নিরাপত্তার প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি ‘লৌহবর্মভূষিত’। তবে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলকে কোন ধরনের সমর্থন দেওয়া হবে তা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৪০ হাজার সৈন্য রয়েছে। এদের বেশির ভাগ রয়েছে তেল-সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোতে। বিভিন্ন কৌশলগত বিমান এবং নৌঘাঁটিতে রয়েছে তারা। সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান এয়ারবেজে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭৬তম এয়ার এক্সপেডিশনারি উইং রয়েছে। এখান থেকে এফ-১৬ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কাজ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল ধাফরা বিমানঘাঁটিতে রয়েছে এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান।
কুয়েতের আলি আল-সালেম বিমান ঘাঁটিতে রয়েছে ৩৮৬তম এয়ার এক্সপিটিশনারি উইং। কাতারের এআই উদিদ এয়ারবেজে রয়েছে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদরদফতর। এখানে কয়েকজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এখনও সেখানে আছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি। বাহরাইনে আছে প্রায় ৯ হাজার মার্কিন সৈন্য। ইউএস নেভাল ফোর্সেস সেন্ট্রাল কমান্ড এবং ইউএস ফিফথ ফ্লিটের সদরদফরতও সেখানে। ওমানও মার্কিন সামরিক ওভারফ্লাইট এবং পোর্ট কল অনুমোদন করে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই