প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ নেওয়া থাকলেও করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের আক্রমণ হতে পারে শরীরে। বিশ্বের ১০ শীর্ষ কোভিড-বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের ১২৪টি অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডেল্টা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ২০ কোটি মানুষ ডেল্টার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডব্লিউএইচও।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভারতে প্রথম চিহ্নিত হওয়া এই ভেরিয়েন্টটির আক্রমণে মানুষ শুধু গুরুতর অসুস্থই হয়ে পড়ছেন না, এটি খুব দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে টিকা নেননি এমন ব্যক্তিদের দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন অত্যন্ত বেশি, তেমনি টিকার দু’টি ডোজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন এমন প্রমাণ অমিল নয়। বরং তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
বিশেষজ্ঞেরা শুরুতেই বলেছেন, করোনার বাকি ভেরিয়েন্টগুলোর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ডেল্টাই সব চেয়ে সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। ব্রিটেনের মাইক্রোবায়োলজিস্ট শ্যারন পিককের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সামনে সব চেয়ে বড় ঝুঁকি হল ডেল্টা।”
ব্রিটেনের সংস্থা ‘পাবলিক হেল্থ ইংল্যান্ড’ সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্রিটেনে ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ৩ হাজার ৬৯২ জন করোনা-রোগীর মধ্যে ৫৮.৩ শতাংশের টিকাকরণ হয়নি তবে ২২.৮ শতাংশের টিকার দু’টি ডোজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
সিঙ্গাপুরেও ডেল্টা ভেরিয়েন্টের দাপট সব চেয়ে বেশি। দেশটির সরকারি তথ্য বলছে, আক্রান্তদের তিন চতুর্থাংশই কিন্তু টিকা নিয়েছেন। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সেদেশে করোনা-আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এমন ৬০ শতাংশরই টিকা নেওয়া আছে।
আমেরিকায় করোনা আক্রান্তদের ৮৩ শতাংশই ডেল্টা ভেরিয়েন্টের শিকার। সেদেশের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউচি জানিয়েছেন, টিকাকরণের হার কম এমন এলাকাগুলোতে ডেল্টার বাড়বাড়ন্ত বেশি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিকিৎসা উপদেষ্টা ফাউচির বক্তব্য, ‘‘আমেরিকায় ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষদের মধ্যে করোনা মহামারী আকার নিচ্ছে।”
ফ্লরিডা, টেক্সাস, মিসৌরির মতো প্রদেশগুলোতে টিকাকরণের হার কম বলে সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী। সার্জেন জেনারেল বিবেক মূর্তি সম্প্রতি জানিয়েছেন, সেদেশে করোনায় মৃতদের ৯৯.৫ শতাংশের টিকা নেওয়া ছিল না।
ইসরায়েলেও গত কয়েক মাস ধরে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডেল্টা স্ট্রেন। সরকারি তথ্যানুযায়ী, কোভিডে সর্বাপেক্ষা কার্যকর ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা বর্তমানে সেদেশে সংক্রমণ রুখতে মাত্র ৪১ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে।
চীনের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালে প্রথম চিহ্নিত হওয়া উহান স্ট্রেনের তুলনায় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আক্রান্ত ব্যক্তির নাকে ১০০০ গুণ বেশি ভাইরাস থাকে।
মাইক্রোবায়োলজিস্ট শ্যারন পিকক বলেছেন, “ডেল্টা আক্রান্তের ‘ভাইরাল লোড’ বেশি হওয়ায় সম্ভবত অন্যকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা বেশি। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।”
নিউজ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শীঘ্রই বিদেশে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়াকে প্রথমে ‘লং ডিসেটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখানে থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক সুস্থতা ওপর নির্ভর করে আমরা যাতে অতি দ্রুত উনাকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি সেই প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা ‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’র ভাড়া করার জন্য কাজ শুরু করেছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও চলছে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরের দিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি প্রদান করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতির দুই মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেখান থেকে মুক্তি পান।
এরই মাঝে বিভিন্ন জটিল রোগে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে একাধিকবার হাসপাতালেও ভর্তি করা হয় এবং তিনি দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালেই কাটিয়ে দেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার তাকে কোন ভাবেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে তার পরিবার ও দল থেকে বিশেষ উদ্যোগে দেশেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। তিনি রাজধানীর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালেই নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৩৪৮ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ১০২৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৬ জন।
আজ শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আরও জানানো হয়, গত ১ দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৭৫৯ জন করোনারোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৮ জন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ২৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্তের হার ৮.৪১ শতাংশ।