এশিয়ার শীর্ষ ১০০ জন বিজ্ঞানীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাময়িকী ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’। সেই তালিকায় নাম এসেছে তিন বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর। তারা হলেন যথাক্রমে সালমা সুলতানা, ফেরদৌসী কাদরী ও সায়মা সাবরিনা। এক সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞান ও গবেষণায় পূর্বেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন এই তিন নারী বিজ্ঞানী।
গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) ‘দ্য এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ১০০’ শিরোনামে ষষ্ঠবারের মত এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে কোভিড–১৯ এর মতো এ বছরের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখা গবেষক ও উদ্ভাবকরা এ বছর এ তালিকায় মনোনিত হয়েছেন। ওয়েবসাইটে বিজ্ঞানীদের পরিচয় ও ছবি এবং তাদের গবেষণার বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
সেই তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, জাপান, হংকং, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের বিজ্ঞানীদের নাম এসেছে। তালিকায় যায়গা করে নেয়া বিজ্ঞানীরা বর্তমান সংকটময় সময়ে মলিকুলার ইমেজিং থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
তিন বিজ্ঞানীর পরিচয় জেনে নেয়া যাক:
ড.ফেরদৌসী কাদরী,তিনি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর, বি) ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুদের মধ্যে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তার প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে প্রশংসনীয়। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কলেরা মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের টিকা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এমন কয়েকজন মানুষের মধ্যে তিনি অন্যতম।
বিজ্ঞানী সায়মা সাবরিনা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। ন্যানোম্যাটেরিয়্যালের ব্যবহার নিয়ে গবেষণার জন্য ২০২০ সালে তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসেভিয়ের ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ফর আর্লি ক্যারিয়ার ওমেন সায়েন্টিস্ট ইন দ্য ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড পেয়েছিলেন।
আরেক বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা হলেন মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এমএএলএফ) চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে পশুচিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষাবিস্তারে তার ভূমিকা রয়েছে। তিনি পশুর রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিসহ একটি ভেটেরিনারি হাসপাতালও গড়ে তুলেছেন। যা গবাদিপশুর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সহজ করতে সক্ষম হয়েছে।এদিকে তাদের এমন অভূতপূর্ব সাফল্যে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে গোটা দেশ এই অর্জন যেমন তাদের তেমনি বাংলাদেশের।
আজ রবিবার ১৮ এপ্রিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে দুইটি পিসিয়ার মেশিনসহ তিন কোটি টাকার গবেষণা সরঞ্জাম। বিশ্বিবিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইনস্ট্রুমেন্টাল একসেস অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ।
বাংলাদেশ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। গত বছর ২৭ মে সিডিং ল্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ এওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ বিজ্ঞানীদের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য স্বল্প খরচে উন্নত মানের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. দিলারা ইসলাম শরীফ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘গত বছর বিশ্বের ১০টি দেশের মোট ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এওয়ার্ডটা পেয়েছি। যে গবেষণা সরঞ্জাম আমরা পেয়েছি, এতে করে একটি উচ্চ মানসম্পন্ন ল্যাব তৈরি করতে পারবো। যা বায়োটেকনোলজিক্যাল গবেষণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ২ টি পিসিআর মেশিন, ল্যামিনার ফ্লো, মাইনাস ২০ ডিগ্রি ফ্রিজসহ প্রায় ৯৪ টি উচ্চতর গবেষণা ইকুয়েপমেন্ট।’
উনি আরো বলেন,"বর্তমান এ করোনা মহামারীর সময়ে হয়তো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার প প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ না পাওয়ায় আমরা এখন করোনা টেস্ট করতে পারবে না।কিন্তু নতুন স্ট্রেন গুলো নির্ধারণ করে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা কিংবা এর প্রতিরোধ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া সম্ভব হবে। যা করোনা টেস্ট এর চেয়েও অধিক গুরুতর হবে বলে আমরা মনে করি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে উন্নতমানের এসব যন্ত্রপাতি বসিয়ে একটি আদর্শ ল্যাব তৈরি করতে পারলে ভবিষ্যতে আরো সুদূরপ্রসারী স্থানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করতে সম্ভবপর না হলেও পরবর্তীতে আমরা এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে হয়তো উন্নত বিশ্বের সামনে নতুন নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও বিশ্লেষণমূলক কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবো।"
উল্লেখ্য, আমেরিকার সিডিং ল্যাব নামের একটি বেসরকারি সংগঠন এই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। যার উদ্দেশ্য নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের নতুন কিছু আবিষ্কার ও গবেষণায় উৎসাহিত করা। জানা যায়, এই অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে গবেষণার যন্ত্রপাতি বিশ্বের ১০টি দেশের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি বিভাগে সরবরাহ করবে। এছাড়া যারা মনোনীত হয় তাদেরকে বিশ্বব্যাপী সিডিং ল্যাবের অন্য বিজ্ঞানীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ থাকবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নিউজ চ্যানেল পিবিএসকে বুধবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ওই মন্তব্য করেন। খবর দ্য ডনের।
ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে যখন ন্যাটো জোটের দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করা হচ্ছিল, তখনই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, এখন যখন ১০ হাজারেরও কম সেনা রয়েছে এবং তাদেরও চলে যাওয়ার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে তখন তালেবানকে রাজনৈতিক সমঝোতায় বাধ্য করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তালেবান বর্তমানে এ যুদ্ধে নিজেদেরকে বিজয়ী ভাবছে।
আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ আশরাফ গনি অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান থেকে প্রায় ১০ হাজার জঙ্গি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে।
এই প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানে প্রায় ৩০ লাখ আফগান নাগরিক বসবাস করছে, যাদের অনেকেই তালেবানের জাতিগোষ্ঠীর লোক, বিশেষ করে পশতুন জনগোষ্ঠী।
আফগানরা পাকিস্তানের যেসব ক্যাম্পে বসবাস করে সেগুলোতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত মানুষের বসবাস। পাকিস্তানের পক্ষে কীভাবে তাদের খোঁজখবর রাখা সম্ভব?
পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আফগান সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে তালেবানের একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হওয়া।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানকে দু’টি বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে।
প্রথমটা হলো, আবার পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের ঢল নামবে কিন্তু সেরকম পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পাকিস্তানের নেই।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তানে আফগানিস্তানের চেয়ে বেশি পশতুন বসবাস করে। যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানি পশতুনরা বসে থাকবে না বরং তাদের এ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার অভিযোগ করছে যে, দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তালেবানকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে পাকিস্তান কিন্তু এই অভিযোগ কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।