কয়েক মাস উপর্যুপরি সতর্কতার পর জাতিসংঘ সমর্থিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানগত প্রমাণে দেখা গেছে গাজায় মানবিক বিপর্যয় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে পরিণত হচ্ছে। তাই ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আইনি দায়িত্ব পালন করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে জাতিসংঘ। সেইসঙ্গে যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তা, ভলকার তুর্ক বিবিসি-র একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য দোষ রয়েছে। তারা যে গাজা যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করছে সেটিরও ‘প্রমাণযোগ্য’ ঘটনা রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার তুর্ক বলেছেন, অভিপ্রায় প্রমাণিত হলে তা হবে যুদ্ধাপরাধ।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ ও ইসরায়েলের অর্থনীতি মন্ত্রী নির বারকাত তুর্কের সতর্কবার্তাকে ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তার মন্ত্রিপরিষদের সহকর্মীদের মতো বারকাত জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্বের পাঠানো সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে। তবে ইসরায়েল মিথ্যাচার করে বলছে, হামাস নিজেদের সাহায্য করার পর বাকি যা থাকে সেগুলো বিতরণ করতে ব্যর্থ জাতিসংঘ। কিন্তু গাজা উপত্যকার উদ্দেশ্যে আসা ত্রাণবাহী লরিগুলোর দীর্ঘ সারি দেখা গেছে মিসরের রাফা সীমান্তে। জটিল ও আমলাতান্ত্রিক তল্লাশির পরই এগুলো ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে পারে।
পর্যাপ্ত সহায়তা গাজায় না পৌঁছানোয় জর্ডান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশগুলো আকাশপথে বাধ্য হচ্ছে সরবরাহ পাঠাতে। আর এই ত্রাণের ভাগ নিতে আসা ফিলিস্তিনিরা সমুদ্রে ডুবে মরছে। অনেকে আবার প্যারাসুট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।
মার্কিন নৌবাহিনী সমুদ্রপথে সাহায্যের জন্য একটি অস্থায়ী পিয়ার তৈরি করতে আটলান্টিক জুড়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্লোটিলাও পাঠাচ্ছে।
ইসরায়েল যদি গাজায় সম্পূর্ণ রাস্তার প্রবেশাধিকার দেয় এবং উত্তর গাজার প্রায় আধা ঘণ্টা পথের দূরত্বে আধুনিক কনটেইনার বন্দরের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহের গতি বাড়ায় তবে এসবের কোনটিরই প্রয়োজন হবে না। জেনেভা থেকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তুর্ক বলেছেন, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইসরায়েল সাহায্য সরবরাহের গতি কমিয়ে দিচ্ছে বা আটকে রেখেছে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বেসামরিক ও সৈন্যদের ওপর হামাসের হামলারও নিন্দা করেছেন তুর্ক। তবে তিনি এও বলেছিলেন, যুদ্ধের কোনো পক্ষই গাজায় সহায়তা বন্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টাসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে না। সূত্র: ইত্তেফাক
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তালেবান। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর পর দেশটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান।
আর তালেবান কাবুল দখলের আগেই আফগানিস্তান ছেড়ে পালায় মার্কিন মদতপুষ্ট দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এরপর হঠাৎ করেই দেশটির পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। আফগানিস্তানের মাটি ছেড়ে পালাতে থাকে বিদেশি সব সৈন্য ও নাগরিকরা।
আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতিকে নিম্নোক্তভাবে মূল্যায়ন করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি বলেছেন, আমেরিকা গত ২০ বছর ধরে নিজের মূল্যবোধগুলোকে আফগানিস্তানের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু ওয়াশিংটনের কপালে পরাজয় ও বিপর্যয় ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
বুধবার রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ভ্লাদিভস্তকে স্কুলের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর একটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
পুতিন বলেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হলো- কোনও মূল্যবোধ অন্য কোনও জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। আফগানিস্তানে আমেরিকার হস্তক্ষেপ ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলেও মন্তব্য করেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন বাহিনী গত ২০ বছরে আফগানিস্তানের জনগণের জীবন-যাপনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। মার্কিনিরা আফগানদের ওপর নিজেদের নিয়মকানুন ও জীবনযাপনের আদর্শ জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, এর ফলাফল হিসেবে এসেছে বিপর্যয়। আর আমেরিকার হয়ে যারা কাজ করেছেন তারা প্রাণ হারিয়েছেন। আর এই যুদ্ধে আমেরিকার অর্জন শূন্য।
পুতিন আফগানিস্তান ইস্যুতে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, আফগানদের মতো কোনও জাতির সঙ্গে কাজ করতে গেলে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং দর্শন আমলে নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
ইসরায়েল অভিমুখী একটি ব্রিটিশ তেলের ট্যাংকারে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হুথি’। এডেন উপসাগরে চালানো এই হামলায় ট্যাংকারটিতে আগুন ধরে যায়। এরই মধ্যে হামলার দায় স্বীকার করে হুথির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের নৌ শাখা এই হামলা চালিয়েছে।
হুথিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, বেশ কয়েকটি উপযুক্ত নৌ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ‘মারলিন লুয়ান্ডা’ নামের ব্রিটিশ ট্যাংকারটিতে সরাসরি আঘাত করা হয়েছে।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল করা পশ্চিমা জাহাজগুলোতে সরাসরি হামলা শুরু করেছে গত দুই মাস যাবত। ফলে গত ২ মাসে সেখান দিয়ে সব ধরণের বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ৪৫ শতাংশ কমে এসেছে।
আমেরিকার নানা পদক্ষেপেও কমানো যাচ্ছে না বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির হামলা। হুদিদের দাবি, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা দ্রুত কার্যকর করা। সূত্র: প্রেসটিভি, বিডি প্রতিদিন