a
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতার রাজনীতি (Power Politics) মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একটি সর্বজনীন বাস্তবতা। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে এটি নানা রূপ পরিগ্রহ করেছে। অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করার বা প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতাই এই রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। আধুনিক কালে এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হয়ে উঠেছে এবং দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখছে।
রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রভাব বিস্তার করে, যার মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রধান বিবেচনা করা হয়।
প্রাচীন যুগে শারীরিক শক্তি ছিল বিজয়ের মাপকাঠি। মধ্যযুগে কামান ও আগ্নেয়াস্ত্র সেই জায়গা দখল করে। কিন্তু নেপোলিয়নিক যুগে ইউরোপের আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আরও উন্নত অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। সামরিক শক্তি ছোট ও দরিদ্র দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবহৃত হতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আধুনিক অস্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বোমার ব্যবহার দেখা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব বিভক্ত হয় দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। তখন থেকেই প্রকৃত অর্থে ক্ষমতার রাজনীতি শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী জগৎ এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্লক মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটে এবং একমেরু বিশ্বে পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তবে এই ফাঁকে চীন অর্থনৈতিক দৈত্য হিসেবে উঠে আসে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে।
বাংলাদেশের জন্ম হয় ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় এবং সেই সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার কূটনৈতিক ছায়ার নিচে থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের যাত্রা। ফলে নিজস্ব স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলার সুযোগ তখন মেলেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অবহেলার ফলেই ১৯৭৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিবের পতন ঘটে সামরিক-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। তিনি একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণে সচেষ্ট ছিলেন। বিশ্বের দ্বিধাবিভক্ত পরাশক্তির কাঠামো তখন তার পক্ষে ছিল। তিনি একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন, অন্যদিকে চীন ও মুসলিম বিশ্ব (যেমন: পাকিস্তান) এর সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন। কিন্তু ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতির শিকার হয়ে ১৯৮১ সালের মে মাসে প্রাণ হারান।
এরশাদের আমলে ভারত সন্তুষ্ট থাকলেও খালেদা জিয়ার শাসনামলে ভারতীয় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার রাজনীতি এক চরম সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পৌঁছায়। ১৯৯৬ সালে ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে তাদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও তারা কিছু গুরুতর রাজনৈতিক ভুল করে বসে, যার ফলে ভারতের আধিপত্য আবারও প্রতিষ্ঠা পায়। নির্বোধ সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার ভারতনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকাল শুরু হয়, যেখানে কার্যত কোনও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বিদ্যমান ছিল না।
২০২৪ সালের ছাত্রনেতৃত্বাধীন ‘জুলাই বিপ্লব’-এর মাধ্যমে অধ্যাপক ড. ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। বর্তমান সরকার ভারতের ব্যাপারে সতর্ক এবং একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গঠনের লক্ষ্যে সচেষ্ট। সম্প্রতি ড. ইউনুসের চীন সফরকে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চীন অর্থনৈতিক সহায়তা, মংলা বন্দর উন্নয়ন, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পানি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্ক দ্রুত উন্নয়নশীল এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা করা যায়।
তবে আন্তর্জাতিক ক্ষমতার রাজনীতিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও অতিরিক্ত নির্ভরতা কোনওভাবেই বুদ্ধিদীপ্ত হবে না। ভারত এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, তারা যেকোনো সময় বাংলাদেশকে উপেক্ষা করতে পারে।
চীনের সাথে সম্পর্ককে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে এবং পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ককেও সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে বজায় রাখা প্রয়োজন। শত্রুর শত্রু যে সবচেয়ে বড় বন্ধু—এই কৌশলগত বাস্তবতাও মনে রাখতে হবে।
দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার রাজনীতি যেন জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন না করে। যারা ক্ষমতায় যেতে চাইছেন, তারা যেন কেবল ক্ষমতার স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন না দেন—এই প্রত্যাশাই থাকবে।
ফাইল ছবি
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান শনিবার বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে এখন ইইউকে নতুন কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। আর কৌশলটি হবে শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধে জয়ের পরিবর্তে শান্তি চুক্তির একটি ভালো প্রস্তাব।
ভিক্টর অরবান তার বক্তৃতায় বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চারটি ধারণার ওপর তাদের কৌশল সাজিয়েছিল। প্রথমটি হলো, ন্যাটোর পাঠানো অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে হারাতে পারবে ইউক্রেন। দ্বিতীয়টি হলো, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে এবং রাশিয়ার নেতৃত্বকে অস্থিতিশীল করে দেবে। তৃতীয়টি হলো, নিষেধাজ্ঞা ইউরোপের চেয়ে রাশিয়ার বেশি ক্ষতি করবে। চতুর্থটি হলো পুরো বিশ্ব ইউরোপের পাশে দাঁড়াবে।
অরবান বলেছেন, এগুলো সব ব্যর্থ হয়েছে, ইউরোপের সরকারের একের পর পতন হচ্ছে এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এখন নতুন কৌশল প্রয়োজন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা এমন একটি গাড়িতে বসে আছি যে গাড়ির চারটি চাকাই পাংচার হয়ে গেছে। এটি পুরোপুরি পরিষ্কার। এভাবে যুদ্ধে জয় পাওয়া সম্ভব না।
কট্টর জাতীয়বাদী অরবান আরও বলেছেন, ইউক্রেন এভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয় পাবেনা, কারণ সামরিক দিক দিয়ে রাশিয়া অনেক শক্তিশালী। সূত্র: আল জাজিরা, আল আরাবিয়া
ফাইল ছবি: মোল্লা জালাল ও উদয় হাকিম
সাংবাদিক নেতা মোল্লা জালাল পুনরায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি ঢাকার সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিং বিডির প্রধান সম্পাদক উদয় হাকিম। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংগঠনটির প্রীতিভোজ ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন শেষে মোল্লা জালাল ও উদয় হাকিমের নেতৃত্বে ৩৫ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন সমিতির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক নুরুল হাসান খান। এ সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ৬ জেলার নেতারা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। এ কমিটি আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির প্রথম বৈঠক আগামী ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক উদয় হাকিম।
কমিটির সহ-সভাপতিরা হলেন- আশরাফ আলী (টাঙ্গাইল), মহসিন আব্বাস (কিশোরগঞ্জ), নুরুল হাসান খান (নেত্রকোনা), পল্লব মাহমুদ (জামালপুর), রুশো হায়দার (শেরপুর)। যুগ্ম সম্পাদকরা হলেন- ইব্রাহিম খলিল খোকন (কিশোরগঞ্জ), মোহাম্মদ শাহজাদা (জামালপুর), শওকত আলী খান লিথো (নেত্রকোনা), আকতার হোসেন (ময়মনসিংহ) ও তানজিল রিমন (শেরপুর)।
এছাড়া কমিটির কোষাধ্যক্ষ সরদার ফরিদ আহমদ, প্রচার সম্পাদক বাহরাম খান, দফতর সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া। সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদটি এখনো শূন্য রয়েছে। কার্যকরী কমিটির প্রথম সভায় তা পূরণ করা হবে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা পদাধিকার বলে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার সভাপতি আজিজুল হক এরশাদ, সাধারণ সম্পাদক হামিদ মোহাম্মদ জসীম, টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার সভাপতি তালুকদার হারুন, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মান্না, ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি ঢাকার সভাপতি উৎপল কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, জামালপুর সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার সভাপতি আবু সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল, নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার সভাপতি ফারুক তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ করিম, শেরপুর সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার আহবায়ক হকিকত জাহান হকি ও সদস্য সচিব মামুন আবদুল্লাহ।
এছাড়া ৬ জেলার নারী সদস্যরা হলেন- মফিদা আকবর (ময়মনসিংহ), শাকিলা জেসমিন (কিশোরগঞ্জ), শাহনাজ পারভীন এলিস (টাঙ্গাইল), বনশ্রী ডলি (নেত্রকোনা), খাতুনে জান্নাত কণা (জামালপুর) এবং তাছলিমা হোসেন শিখা (শেরপুর)।