তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকায় বিএনপির নির্বিঘ্নে সমাবেশের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ ও সেখানে অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে আনা হয়েছে। তারপরও যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, বাড়াবাড়ি করা হয়, তাহলে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ তারিখের পরিবর্তে এগিয়ে এনে ৬ তারিখ করেছেন। যাতে সেই মঞ্চ, প্যান্ডেল গুটিয়ে ফেলার পর বিএনপি মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ করতে পারে। কোনো সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া সহজ কিন্তু এগিয়ে আনা সহজ নয়। তারপরও বিএনপির জন্য আওয়ামী লীগ সেটি করেছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি নির্বিঘ্নে সারা দেশে সমাবেশ করছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন সমাবেশ করতাম আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা, বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের দুপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া ছিল। সহজে আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। রাসেল স্কয়ারে আমরা ২০ জন নিয়ে দাঁড়ালে পুলিশ লাঠিপেটা করত। সেই ছবিগুলো আপনারাই (সাংবাদিক) সংগ্রহ করেছেন এবং এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে। তাদের আমলে আমাদের প্রয়াত নেতা মো. নাসিমকে পুলিশ লাঠিপেটা ও জ্যেষ্ঠ নেতা মতিয়া চৌধুরীকে টানাহেঁচড়া করেছিল। আমিও পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছি। এভাবে তাদের (বিএনপির) কোনো নেতা আমাদের ১৪ বছরের আমলে এসবের শিকার হতে হয়নি। সরকার তাদের সহায়তা করছে বিধায় তারা নির্বিঘ্নে সারা দেশে সমাবেশ করতে পারছে।
বিএনপির সমাবেশে জঙ্গি প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, এ দেশের জঙ্গিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপি, তাদের কারণেই জঙ্গিদের উত্থান ঘটেছে। সম্প্রতি জঙ্গিদের যে অপতৎপরতা দেখতে পাচ্ছি এটির সঙ্গেও বিএনপির অপতৎপরতা একই সূত্রে গাথা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে বিএনপির আমলে। বাংলা ভাইকে মাঠে নামিয়েছিল বিএনপি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলা ভাইকে পুলিশ প্রটেকশন দেওয়া হয়েছিল। অপারেশন কিলিং কমান্ডার বাংলা ভাইয়ের নেপথ্যে গডফাদার ছিলেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, আলমগীর কবীর, নাদিম মোস্তফা, ব্যারিস্টার আমিনুল হকসহ আরও অনেকেই। এভাবেই জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ও বিস্তৃতি ঘটিয়েছিল বিএনপি। তাদের সময়েই ৫শ জায়গায় বোমা ফাটিয়ে জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে, যার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সারা দেশে সমাবেশের নামে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিরাও আগের তুলনায় তৎপর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিএনপি নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে?’ শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের একটি হোটেলে নিউইয়র্ক মেট্রাপলিটন আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলাতক আসামি, অর্থ চোর, অস্ত্র চোরাচালানকারী, খুনি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী (তাদের নেতা) এই যদি একটি দলের নেতা হয়- তবে মানুষ কেন সেই দলকে এবং তাকে ভোট দেবে?’
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি।
বিএনপির নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এখনো সেই পোড়া মানুষের মুখ দেখলেই বোঝা যাবে যে কী জঘন্য কাজ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা এটি করেছে, তাদের মতো আর কেউ ঘৃণ্য হতে পারে না।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণ সঠিকভাবে ভোট দেবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অন্তত অনুধাবন করা উচিত যে- তারা নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে এবং নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ায় আজ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নৌকায় (দেশের জনগণ) ভোট দেওয়ার কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে থাকেন তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বিদেশে কারও সঙ্গে কথা বলা যেত না। এখন মানুষ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে।
প্রধানমন্ত্রী অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেন সবসময় উজ্জ্বল হয়- তা আপনাদের সবাইকে সর্বদা মনে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আজ যখন বিশ্বনেতারা (বাংলাদেশের সাফল্য) স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তখন আমাদের কিছু পাপাচারী যা বলছে তাতে মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্তরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে ও তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়া ও অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।’
নিন্দুকদের মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিথ্যা অপপ্রচার করলে তাদের মুখ উন্মোচিত করতে হবে। মানুষের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। এই চোরচক্র থেকে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: বাসস
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিশ্বনেতার চিঠি দেওয়া ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির চিঠির প্রতিটি কথাই মিথ্যা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। হানিফ শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে দেশ, উন্নয়ন, সরকার ও শান্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুই দিন আগে সংবাদ মাধ্যমে হঠাৎ দেখলাম বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে নিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। হিলারি ক্লিনটন, বান কি মুনসহ বিশ্বের ৪০ জন নেতার নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এ চিঠি কাকে দিয়েছে? কারা দিয়েছে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নাকি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠি বিজ্ঞাপন আকারে দেখতে হবে? নিউজ আকারে আসেনি কেন?
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এই চিঠির কথা বলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ড. ইউনূস নিজে সাজিয়ে লিখেছেন, যাদের নামের কথা লেখা হয়েছে সেসব নাম ব্যবহার করে নিজেকে সেভ করতে চায়। দারিদ্র্য বিমোচনে ৯০ লাখ মহিলা নাকি ঋণ নিয়েছেন। যারা ঋণ নিয়েছিল তাদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেছে কিনা- জানা নেই। আমরা শুনেছি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছিল পরে কিস্তি দিতে না পারায় মানুষের ঘরের টিন খুলে নিয়ে গিয়েছে। ঝিনাইদহে ৩৭ জন আত্মহত্যা করেছে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় রিকশা চালায় এমন অসংখ্য নজির আছে।
হানিফ বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন এমন নজির নেই। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার বিন্দুমাত্র কন্ট্রিবিউশন নেই। উল্টো মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়ার অজস্র রেকর্ড আছে। দেশের দুর্যোগে, ঘূর্ণিঝড়ে কবে কারো পাশে তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন এমন একটা নজিরও কেউ দেখাতে পারবে না।
ড. ইউনূসের সঙ্গে কিসের অন্যায় হচ্ছে- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। কোথায় কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন তার তদন্ত হচ্ছে। নোবেল বিজয়ী কি আইনের ঊর্ধ্বে? আমেরিকার এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন মামলা হয়েছিল। পরে জেলেও গিয়েছিলেন। আইন সব দেশে সবার জন্য সমান। রাষ্ট্রের প্রধান হোন আর নোবেল বিজয়ী হোন না কেন অপরাধী হিসেবে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। ড. ইউনূস অন্যায় করেছেন। তাই গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ টেলিকম নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এটাকে হ্যারেসমেন্ট বলার কোনো সুযোগ নেই। এই চিঠি ষড়যন্ত্রের আলামত।
দেশের আলেম সমাজকে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ নেই। মানুষ হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিতদের ইসলাম ধর্ম কখনো সমর্থন করে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মানুষ হত্যা করলে শাস্তি পেতে হয়। যারা সন্ত্রাসী, মানুষ হত্যা করে তাদের বিষয়ে সঠিক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালাইন্স চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহ-সভাপতি নুরুল আক্তার, গণতন্ত্রী পার্টি মহাসচিব ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। সূত্র: বাসস