গত রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি হেফাজতে থেকেই কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দিয়েছে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ছয় সমন্বয়ক হলেন- মো. নাহিদ ইসলাম, মো. সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) তাদেরকে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বাবা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত শুক্র ও শনিবার (২৬,২৭ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।
পরে রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি হেফাজতে থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ৬ সমন্বয়ক।
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সর্বশেষে তাদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে রিট করা হয় আদালতে। যদিও আদালতে বিচারক অসুস্থ থাকায় এখনো পূর্ণাঙ্গ শুনানী ও রায় প্রদান করা হয়নি।
এদিকে আজ দুপুর আড়াইটায় ৬ সমন্বয়কারী ও সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি চেয়ে ডিবি কার্যালয়ের সামনে মানব বন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিক্ষুব্ধ নাগরিক এবং শিক্ষকসমাজ। সূত্র: যুগান্তর
‘হে নূতন,/ দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।/ তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন সূর্যের মতন/’— নিজের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখকে এভাবেই ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু। মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে এক ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল এই পঁচিশে বৈশাখ।
১৮৬১ সালের এদিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। আজ পঁচিশে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। দিবসটি উদ্যাপনে ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্থার পক্ষ থেকে আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিভূ। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় তিনি সগৌরবে বিচরণ করেছেন এবং রেখেছেন স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত অবদান। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদ, বৌদ্ধধর্মের অহিংস ও ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ এবং বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় সাধন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন। বিশ্বে জঙ্গিবাদ, উগ্রতা, জাতীয়তাবোধের সংকীর্ণতা, শ্রেণিবৈষম্য, জাতিতে জাতিতে ও ধর্মে ধর্মে হানাহানি প্রতিরোধে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীল কর্ম আজও মানবজাতিকে আলোর পথ দেখায়। তিনি তত্কালীন পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে। তার জমিদারির সময় দরিদ্র প্রজাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি চালু এবং ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন পরবর্তীকালে গ্রামীণ উন্নয়নে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। তার জীবনাদর্শ ও সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে উঠেছিল প্রেরণার বিশেষ উৎস। শাশ্বত বাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা অর্থাৎ সকল অনুভব বিশ্বস্ততার সঙ্গে উঠে এসেছে রবীন্দ্রসাহিত্যে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছাতেই রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সংকট উত্তরণে প্রেরণা নিতেন রবীন্দ্রসাহিত্য থেকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। তিনি প্রধানত কবি। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। বাঙালি সমাজে তার রচিত সংগীতের জনপ্রিয়তা এত বছর পরেও তুলনাহীনভাবে বাড়ছে। তিনি ২ হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর বিশ্বভারতী থেকে ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া ১৯ খণ্ডের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে। এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সূত্র: ইত্তেফাক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনে আসছে না। ফলে সেই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনই মন্তব্য করেন। সিইসি বলেন, নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা অসাংবিধানিক ও আইনের পরিপন্থী। সংবিধানে সভা-সমাবেশ করার যে অধিকারের কথা বলে হয়েছে তা শর্তসাপেক্ষে।
এবারের নির্বাচন একটু ভিন্ন ধরনের। কারণ ২০১৪ সাল বাদে নির্বাচনের আগে সংঘাত ও সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি হয়নি। কারণ নির্বাচনগুলো ছিল সর্বজনীন। তিনি বলেন, যারা সভা-সমাবেশ করছে নির্বাচনের পক্ষে তাদেরও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নির্বাচনের পক্ষে ও বিপক্ষে তারা মুখোমুখি হলে সংঘাতের ঝুঁকি থাকে। আমরা চাই, এ ধরনের যে কোনো ঘটনা যাতে না ঘটুক। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে কোনো সমস্যা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থেকেই নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সচেতন হতে হবে, ভোটকেন্দ্রে কোন কারচুপি হচ্ছে কিনা? যে কোনো উপায়ে জেতার মানসিকতা থেকে প্রার্থীদের বেরিয়ে আসতে হবে জানান সিইসি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নিয়ে নির্বাচন কমিশন মাথা ঘামাচ্ছে না। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। ভোট করতে প্রয়োজন ১২ লাখ জনবল, কিন্তু কমিশনের আছে মাত্র ১ হাজার ৫০০ লোকবল। ফলে বিভিন্ন দপ্তর থেকে জনবল নিতে হয় কমিশনকে। সিইসি মন্তব্য করেন, এককভাবে কমিশনের পক্ষে নির্বাচন সফল করা সম্ভব হবে না, সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই নির্বাচন সফল হবে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য না হলে পদত্যাগ করবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এককভাবে কমিশনকে দায়বদ্ধ করা যাবে না, এর দায় সরকারের ওপরেও বর্তাবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করেন, এটি একটি রাজনৈতিক বিতর্কিত প্রশ্ন। এই বিতর্ক সমাধান করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই। এ সময় তিনি বলেন, তবে আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্রসহ ২৭টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কোন কোন দল নির্বাচন বয়কট করতে কোনো বাধা নেই বলেও জানান তিনি। সূত্র: যুগান্তর