a
ফাইল ছবি
১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর প্রায় দীর্ঘ ১৯০ বছরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও পূর্ব বাংলার বাঙালির উপর নেমে আসে কঠিন অন্ধকার । ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জিন্নাহর ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তান নামের একটি অসম রাষ্ট্রর জন্ম হয়! এর মধ্য দিয়ে শুরু থেকে বাঙালির জীবনে আবারও নেমে আসে শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন। ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীন হলেও এই ভূখণ্ডের বাঙালি আবার পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তবে থেমে থাকেনি বাঙালি জাতি। ঔপনিবেশিক পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতি শুরু থেকেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামে। পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে ওঠে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০- এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ৭১ সালে এসে উপনীত হয়। অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। আর বাঙালির এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তানের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে এ স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ধারাবাহিক আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর করে নিয়েগিয়ে, শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।
"বঙ্গবন্ধু" শব্দের অর্থ, বাংলার বন্ধু। বাংলাদশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে থেকেই, বাংলা তথা বাঙালীর অধিকার রক্ষায় নিজের জীবন কে সমপর্ণ করেছিলেন "শেখ মুজিবর রহমান"। তাঁর এই আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ ১৯৬৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে, লক্ষ জনতার সমাবেশে এই মহান নেতাকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাংলা তথা বাঙালীকে যিনি আজীবন নিজের হৃদয়ে আগলে রেখেছিলেন, সেই মহান ব্যক্তিত্ব বাস্তবিকভাবেই ছিলেন বাংলার এবং বাঙালীর বন্ধু।"বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদানের মাধ্যমে যথার্থ ভাবেই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে এবং সার্থক করে তোলা হয়েছে "বঙ্গবন্ধু" শব্দটিকে আক্ষরিক অর্থেই।
শ্রদ্ধেয় শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। "পূর্বপাকিস্তান" কে "বাংলাদেশ" নামে স্বাধীন দেশে রূপান্তরিত করার সংগ্রামে, তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বাংলাদেশে, "জাতির পিতা" সম্মানেও ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে।
সোহেল তানভীর, শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ফাইল ছবি
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী জুড়ে আবারো মৃত্যুর মিছিল চলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে। করোনার ভয়াবহতারোধে কঠোর লকডাউন চলছে সারাদেশে। অকারণে ঘর থেকে বের হওয়া মানা। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কঠোরতা দেখাচ্ছে। এরপরও কারণে-অকারণে অতি উৎসাহী মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছেন।
করোনাকালে স্থলে এ পরিস্থিতি হলেও সাগরে মাছদের মাঝেও যেনো কঠোর লকডাউন চলছে! লাখ টাকা খরচ করে জেলেরা সাগরে গেলেও জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে না। এখানে-সেখানে সপ্তাহ খানেক জাল ফেলেও মাছের দেখা না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়ে অনেকে তীরে ফিরছেন। এতে রমজানের কারণে বাড়তি চাহিদা থাকলেও বাজারে মাছের দেখা নেই। কোনো কোনো ট্রলারের ভাগ্যে জুটা যৎসামান্য মাছ, যা আগুন লাগা দামে বিক্রি হচ্ছে।
জেলেদের দাবি, সাগরে মাছের আকাল চলছে গত কয়েক মাস ধরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ সংকটে বাড়তি দামে লোক হয়রানি যেমন হচ্ছে তেমনি লোকসানও তাদের গুনতে হচ্ছে। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে যাওয়া ট্রলার গুলো বাঁকখালী নদীর তীরে ফিরছে। কিছু কিছু ট্রলারে মাছ নামলেও পরিমাণ একেবারে কম। আবার অনেকে খালি ট্রলার নিয়েই ফিরেছেন।
জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছের আকাল চলছে। জাল ফেলেও মাছের দেখা মিলছে না। ফলে ট্রলারে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় যা পেয়েছি তা নিয়ে বা খালি ঘাটে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের মাঝি ইমরান বলেন, গত বছর এই সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ইলিশ পেয়েছিলাম ৫ হাজার। কিন্তু গত ১২ দিন সাগরে মাছ শিকার করে মাত্র ৩০০টি ইলিশ পেয়েছি। অবশেষে খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফিশারি ঘাটে ফিরতে হয়েছে।
মো. নয়ন নামে আরেক জেলে বলেন, ট্রলার মালিক ২ লাখ টাকার রসদে ১৫ জন জেলে দিয়ে মাছ শিকারে পাঠিয়েছিলেন সাগরে। কিন্তু ১৫ দিন সাগরে জাল ফেলে আশানুরূপ মাছ ভাগ্যে জুটলো না। অল্প পরিমাণ মাছ পেয়েছিলাম, যা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এনে বিক্রি করে টাকা পেয়েছি মাত্র ৪০ হাজার। এতে ট্রলার মালিকের লোকসান হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন আর ট্রলার মালিক Mb সাগরে পাঠাচ্ছেন না।
নুনিয়ারছড়া এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নাঈম উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রতিদিন সকাল-বিকাল সামুদ্রিক মাছে প্রায় ভরা থাকে। কিন্তু এখন অবতরণ কেন্দ্রে মাছের আকাল।
মৎস্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দাম বেড়ে যায় মাছের অবতরণ কম হলে। ট্রলার গুলো যেভাবে খালি ফিরে আসছে তাতে মনে হচ্ছে সাগরে মাছের লকডাউন চলছে। যতোসামান্য যা মাছ মিলছে তা লকডাউনের কঠোরতা হয়তো না মেনে বের হয়ে জালে আটকা পড়ছে। স্থল ও জলে একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় ভুগছে সাধারণ মানুষ আর লোকসান গুনছেন ট্রলার মালিক এবং আগাম দাদন দেয়া ব্যবসায়ীরা। আয় বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকসহ অবতরণ কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কর্মজীবীরা ভুগছেন।
আরেক ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, একে তো মাছের পরিমাণ কম, তার উপর কঠোর লকডাউন। সব মিলিয়ে আমরা মহাবিপদে রয়েছি।
ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার টাকা পড়ছে, রিটা (গুইজ্জা মাছ) বিক্রি হচ্ছে ৪‘শ টাকা, সুরমা সাড়ে ৫‘শ টাকা, চাপা ৩‘শ টাকা ও টুনা ২‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরণের মাছে বাড়তি দাম ৫০ থেকে ১০০-১৫০ টাকা।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সাগরে মাছের আকাল চলায় জেলেদের মাছ শিকারে অনেক ট্রলার মালিক পাঠাচ্ছেন না। ফলে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। গত বছর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ অবতরণ হয়েছিল। সে হিসাবে গত বছরের এ সময়ে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হয়েছে।
কিন্তু এ বছর একই সময়ে গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ১ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়েছে। আর রাজস্ব সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এতে ঘাটতি পড়েছে রাজস্ব আয়ে।
ছবি সংগৃহীত: প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির ৩ নেতার বৈঠক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপির তিন নেতা। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে যাতে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট না সৃষ্টি হয় সে ব্যাপারে আমরা খেয়াল রাখতে বলেছি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি দেশে আবার নতুন করে সংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরির পাঁয়তারা করে তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু সাথীর রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তন সুরক্ষায় ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় রাখা দরকার।
অপরদিকে, বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবেই বিএনপির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান। সূত্র: যুগান্তর