শিক্ষার্থীদের জন্য হেলথ কার্ড ও ভ্যাক্সিন প্রদানের দাবিসহ মোট ৪ দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সংসদ। বাংলাবাজার মোড়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই মৌন মানবন্ধন করে ছাত্র ইউনিয়ন জবি সংসদের নেতৃবৃন্দ।
মানবন্ধনে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা প্লেকার্ডে তাদের চারটি দাবি তুলে ধরেন। সকল শিক্ষার্থীর জন্য হেলথ কার্ড প্রদান করতে হবে, শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাক্সিন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে, লকডাউনে শ্রমজীবি মানুষের আর্থিক দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে এবং শ্রমিক হেনস্থা বন্ধ করতে হবে, কথায় কথায় রিক্সা উল্টানো যাবেনা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কে এম মুত্তাকী বলেন, শিক্ষার্থীদের দ্রুত করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে শ্রমজীবী মানুষের আয় নেমে গেছে প্রায় শ্যূন্যের কোটায়। এই অবস্থায় দ্রুত নিম্নআয়ের মানুষদের আর্থিক দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। নিতান্তই পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষরা খাদ্যের নিশ্চয়তা তো পাচ্ছেই না, রিক্সাওয়ালাদের রিক্সা উল্টিয়ে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন অংকের জরিমানাও করা হচ্ছে। সকল প্রকার শ্রমিক হেনস্থা বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী জুড়ে আবারো মৃত্যুর মিছিল চলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে। করোনার ভয়াবহতারোধে কঠোর লকডাউন চলছে সারাদেশে। অকারণে ঘর থেকে বের হওয়া মানা। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কঠোরতা দেখাচ্ছে। এরপরও কারণে-অকারণে অতি উৎসাহী মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছেন।
করোনাকালে স্থলে এ পরিস্থিতি হলেও সাগরে মাছদের মাঝেও যেনো কঠোর লকডাউন চলছে! লাখ টাকা খরচ করে জেলেরা সাগরে গেলেও জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে না। এখানে-সেখানে সপ্তাহ খানেক জাল ফেলেও মাছের দেখা না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়ে অনেকে তীরে ফিরছেন। এতে রমজানের কারণে বাড়তি চাহিদা থাকলেও বাজারে মাছের দেখা নেই। কোনো কোনো ট্রলারের ভাগ্যে জুটা যৎসামান্য মাছ, যা আগুন লাগা দামে বিক্রি হচ্ছে।
জেলেদের দাবি, সাগরে মাছের আকাল চলছে গত কয়েক মাস ধরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ সংকটে বাড়তি দামে লোক হয়রানি যেমন হচ্ছে তেমনি লোকসানও তাদের গুনতে হচ্ছে। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে যাওয়া ট্রলার গুলো বাঁকখালী নদীর তীরে ফিরছে। কিছু কিছু ট্রলারে মাছ নামলেও পরিমাণ একেবারে কম। আবার অনেকে খালি ট্রলার নিয়েই ফিরেছেন।
জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছের আকাল চলছে। জাল ফেলেও মাছের দেখা মিলছে না। ফলে ট্রলারে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় যা পেয়েছি তা নিয়ে বা খালি ঘাটে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের মাঝি ইমরান বলেন, গত বছর এই সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ইলিশ পেয়েছিলাম ৫ হাজার। কিন্তু গত ১২ দিন সাগরে মাছ শিকার করে মাত্র ৩০০টি ইলিশ পেয়েছি। অবশেষে খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফিশারি ঘাটে ফিরতে হয়েছে।
মো. নয়ন নামে আরেক জেলে বলেন, ট্রলার মালিক ২ লাখ টাকার রসদে ১৫ জন জেলে দিয়ে মাছ শিকারে পাঠিয়েছিলেন সাগরে। কিন্তু ১৫ দিন সাগরে জাল ফেলে আশানুরূপ মাছ ভাগ্যে জুটলো না। অল্প পরিমাণ মাছ পেয়েছিলাম, যা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এনে বিক্রি করে টাকা পেয়েছি মাত্র ৪০ হাজার। এতে ট্রলার মালিকের লোকসান হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন আর ট্রলার মালিক Mb সাগরে পাঠাচ্ছেন না।
নুনিয়ারছড়া এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নাঈম উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রতিদিন সকাল-বিকাল সামুদ্রিক মাছে প্রায় ভরা থাকে। কিন্তু এখন অবতরণ কেন্দ্রে মাছের আকাল।
মৎস্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দাম বেড়ে যায় মাছের অবতরণ কম হলে। ট্রলার গুলো যেভাবে খালি ফিরে আসছে তাতে মনে হচ্ছে সাগরে মাছের লকডাউন চলছে। যতোসামান্য যা মাছ মিলছে তা লকডাউনের কঠোরতা হয়তো না মেনে বের হয়ে জালে আটকা পড়ছে। স্থল ও জলে একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় ভুগছে সাধারণ মানুষ আর লোকসান গুনছেন ট্রলার মালিক এবং আগাম দাদন দেয়া ব্যবসায়ীরা। আয় বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকসহ অবতরণ কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কর্মজীবীরা ভুগছেন।
আরেক ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, একে তো মাছের পরিমাণ কম, তার উপর কঠোর লকডাউন। সব মিলিয়ে আমরা মহাবিপদে রয়েছি।
ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার টাকা পড়ছে, রিটা (গুইজ্জা মাছ) বিক্রি হচ্ছে ৪‘শ টাকা, সুরমা সাড়ে ৫‘শ টাকা, চাপা ৩‘শ টাকা ও টুনা ২‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরণের মাছে বাড়তি দাম ৫০ থেকে ১০০-১৫০ টাকা।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সাগরে মাছের আকাল চলায় জেলেদের মাছ শিকারে অনেক ট্রলার মালিক পাঠাচ্ছেন না। ফলে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। গত বছর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ অবতরণ হয়েছিল। সে হিসাবে গত বছরের এ সময়ে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হয়েছে।
কিন্তু এ বছর একই সময়ে গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ১ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়েছে। আর রাজস্ব সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এতে ঘাটতি পড়েছে রাজস্ব আয়ে।
বেতন বোনাসের দাবিতে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েক দফা বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। আজ ১০মে সোমবার সকাল থেকে গাজীপুর সদরের হোতাপাড়া এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জয়দেবপুর থানার ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, সোমবার ফুয়াং ফুড লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের চলতি মে মাসের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। বেতন ছাড়াও তাদেরকে আগামীকাল মঙ্গলবার ঈদ বোনাস দেওয়ার কথাও ছিল মালিকপক্ষের। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ নানা আজুহাত দেখাতে শুরু করলে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস এবং চলতি মাসের বেতন চাইলে তারা বেতন ও বোনাস দিবে কি দিবে না সে বিষয়ে শ্রমিকরা মালিক পক্ষ থেকে আশ্বাস না পেয়ে এই বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকরা জানান, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস না পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে তারা কর্মবিরতি পালন করেন, পরে তাদের কথা তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।
মহাসড়ক অবরোধের ফলে সেখানে উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ওসি মামুন আল রশিদ জানান, শ্রমিকদের অবরোধ চলাকালে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বেতন ও ঈদ বোনাসের আশ্বাস দিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলা হয়। পরে শ্রমিকরা কাজে যোগদেন।
কারখানার ম্যানেজার শুক্কুর মাহবুব বলেন, শ্রমিকদের কোনো বেতন বকেয়া রাখা হবে না। নির্ধারিত সময়েই তাদের বেতন, বোনাস পরিশোধ করবে মালিকপক্ষ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবির মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ ঈদ বোনাস দিতেও একমত হয়েছেন।