ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ মারা গেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বুধবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে তিনি মারা যান বলে জানা যায়। ঢাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফারহানা বেগম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গবেষণার জন্য ফিল্ডওয়ার্কে ছিলেন। সেখানে তিনি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন। এর পরই তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্যামনগর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, তাকে (অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ) মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছিল। কী কারণে তিনি মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহানা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি করোনায় আক্রান্ত। আজ (বুধবার) সকালে রাশীদ ফোন করে আমার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। প্রাণবন্ত ও স্বাভাবিক একজন মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়ে খুব খারাপ লাগছে। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে বেদনাহত।”
অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদের পৈতৃক বাড়ি ফেনীতে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী জুড়ে আবারো মৃত্যুর মিছিল চলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে। করোনার ভয়াবহতারোধে কঠোর লকডাউন চলছে সারাদেশে। অকারণে ঘর থেকে বের হওয়া মানা। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কঠোরতা দেখাচ্ছে। এরপরও কারণে-অকারণে অতি উৎসাহী মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছেন।
করোনাকালে স্থলে এ পরিস্থিতি হলেও সাগরে মাছদের মাঝেও যেনো কঠোর লকডাউন চলছে! লাখ টাকা খরচ করে জেলেরা সাগরে গেলেও জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে না। এখানে-সেখানে সপ্তাহ খানেক জাল ফেলেও মাছের দেখা না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়ে অনেকে তীরে ফিরছেন। এতে রমজানের কারণে বাড়তি চাহিদা থাকলেও বাজারে মাছের দেখা নেই। কোনো কোনো ট্রলারের ভাগ্যে জুটা যৎসামান্য মাছ, যা আগুন লাগা দামে বিক্রি হচ্ছে।
জেলেদের দাবি, সাগরে মাছের আকাল চলছে গত কয়েক মাস ধরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ সংকটে বাড়তি দামে লোক হয়রানি যেমন হচ্ছে তেমনি লোকসানও তাদের গুনতে হচ্ছে। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে যাওয়া ট্রলার গুলো বাঁকখালী নদীর তীরে ফিরছে। কিছু কিছু ট্রলারে মাছ নামলেও পরিমাণ একেবারে কম। আবার অনেকে খালি ট্রলার নিয়েই ফিরেছেন।
জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছের আকাল চলছে। জাল ফেলেও মাছের দেখা মিলছে না। ফলে ট্রলারে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় যা পেয়েছি তা নিয়ে বা খালি ঘাটে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের মাঝি ইমরান বলেন, গত বছর এই সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ইলিশ পেয়েছিলাম ৫ হাজার। কিন্তু গত ১২ দিন সাগরে মাছ শিকার করে মাত্র ৩০০টি ইলিশ পেয়েছি। অবশেষে খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফিশারি ঘাটে ফিরতে হয়েছে।
মো. নয়ন নামে আরেক জেলে বলেন, ট্রলার মালিক ২ লাখ টাকার রসদে ১৫ জন জেলে দিয়ে মাছ শিকারে পাঠিয়েছিলেন সাগরে। কিন্তু ১৫ দিন সাগরে জাল ফেলে আশানুরূপ মাছ ভাগ্যে জুটলো না। অল্প পরিমাণ মাছ পেয়েছিলাম, যা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এনে বিক্রি করে টাকা পেয়েছি মাত্র ৪০ হাজার। এতে ট্রলার মালিকের লোকসান হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন আর ট্রলার মালিক Mb সাগরে পাঠাচ্ছেন না।
নুনিয়ারছড়া এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নাঈম উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রতিদিন সকাল-বিকাল সামুদ্রিক মাছে প্রায় ভরা থাকে। কিন্তু এখন অবতরণ কেন্দ্রে মাছের আকাল।
মৎস্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দাম বেড়ে যায় মাছের অবতরণ কম হলে। ট্রলার গুলো যেভাবে খালি ফিরে আসছে তাতে মনে হচ্ছে সাগরে মাছের লকডাউন চলছে। যতোসামান্য যা মাছ মিলছে তা লকডাউনের কঠোরতা হয়তো না মেনে বের হয়ে জালে আটকা পড়ছে। স্থল ও জলে একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় ভুগছে সাধারণ মানুষ আর লোকসান গুনছেন ট্রলার মালিক এবং আগাম দাদন দেয়া ব্যবসায়ীরা। আয় বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকসহ অবতরণ কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কর্মজীবীরা ভুগছেন।
আরেক ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, একে তো মাছের পরিমাণ কম, তার উপর কঠোর লকডাউন। সব মিলিয়ে আমরা মহাবিপদে রয়েছি।
ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার টাকা পড়ছে, রিটা (গুইজ্জা মাছ) বিক্রি হচ্ছে ৪‘শ টাকা, সুরমা সাড়ে ৫‘শ টাকা, চাপা ৩‘শ টাকা ও টুনা ২‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরণের মাছে বাড়তি দাম ৫০ থেকে ১০০-১৫০ টাকা।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সাগরে মাছের আকাল চলায় জেলেদের মাছ শিকারে অনেক ট্রলার মালিক পাঠাচ্ছেন না। ফলে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। গত বছর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ অবতরণ হয়েছিল। সে হিসাবে গত বছরের এ সময়ে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হয়েছে।
কিন্তু এ বছর একই সময়ে গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ১ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়েছে। আর রাজস্ব সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এতে ঘাটতি পড়েছে রাজস্ব আয়ে।
শাটডাউনের ঘোষণা আসবে এমন খবর শুনেই রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সকালে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে মানুষের ঢল নামে।
চলাচলে বাস বন্ধ থাকায় কয়েক ধাপে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কয়েকগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যে ছুটছে সাধারণ মানুষ। প্রতিটি গাড়িকেই পুলিশের তল্লাশি চৌকি পার হতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাড়িকেই ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এতো কিছুর পরও ঠেকানো যাচ্ছেনা মানুষের ঢলকে।
সকালে ঢাকায় প্রবেশ ও বাহিরের অন্যতম সড়ক গাবতলী এলাকা, ঢাকা- মাওয়া রোড, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড। সবকিছু উপেক্ষা করেই ছুটছে সাধারণ মানুষ। শাটডাউনের কথা শুনেই আগে আগে রাজধানী ছাড়ার চেষ্টা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে যানবাহন না পেয়ে অনেকেই আবার কাভার্ডভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।