স্থানীয় সরকারের পর এবার জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শুধু লক্ষ্মীপুর নয়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই অংশ না-নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি'র হাইকমান্ড।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে-এমন নিশ্চয়তা বা পরিবেশ সৃষ্টি না-হওয়া পর্যন্ত তারা আর ভোটে অংশগ্রহণ করবে না। এ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা।
এ লক্ষে সরকারের বাইরে থাকা সব দলকে নিয়ে গড়ে তোলা হবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্রুত আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত শনিবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়াসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত বেশিরভাগ নেতাই উপনির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত জানান।
এক নেতা বলেন, বিএনপি স্থানীয় সরকারের (পৌরসভা) সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাই নির্বাচন বর্জন করলে সুশীল সমাজ বা বাইরের কোনো শক্তি এ নিয়ে তাদের দোষারোপ করতে পারবে না। কারণ, সারা দেশে নির্বাচনের নামে যে তামাশা হচ্ছে তা প্রমাণিত।
এখন মানুষই প্রশ্ন তুলছে-কেন আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। তাই এ সরকার ও ইসির অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না-নেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান ওই নেতা।
আন্দোলনের ইস্যু কী হবে, তা নিয়েও নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন। একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের আমূল সংস্কার এবং বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তনকে সামনে রেখে জনমত তৈরি করতে হবে। কারণ, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের সংস্কার না করে নির্বাচনে অংশ নিলে ফলাফল বিগত দিনের মতোই হবে।
তাই এ দুটি বিষয় সামনে রেখেই আমাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এক নেতা বলেন, এ নিয়ে আমরা অতীতেও আন্দোলন করেছি; কিন্তু দাবি আদায় না-করেই আমরা সরকারের সঙ্গে সংলাপ করে বিগত নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
তাই এবার আন্দোলনের আগে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সরকার যদি আলোচনায় বসে, তাহলে আমরা কোন কোন জায়গায় ছাড় দেব। তা ছাড়া এ দাবি শুধু আমাদের একার নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সবার। সবাই চাচ্ছে, এ দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
বর্তমান সরকারের অধীন তা সম্ভব নয় বলে সবাই মনে করছে। আমাদের বাইরে থাকা দল ও সুশীল সমাজকে এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম করতে হবে। প্রয়োজনে এ ইস্যুতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এ কারণে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, দেশে নির্বাচনি সিস্টেমটা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে শুধু বিএনপি নয়, জনগণও ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না।
তাই এ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে নির্বাচনি ব্যবস্থার পরিবর্তনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে যাব না, তা কখনোই বলছি না। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং জনগণ যদি তা বিশ্বাস করে, তবে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যাব। সেটা যদি আজ হয়, তাহলে আজই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেব। কারণ, জনগণের প্রতি আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী গণমাধ্যমকে বলেন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।
কারণ, এদেশে নির্বাচন বলতে কিছু নেই। সরকারি দল নির্বাচনকে টেন্ডারের মতো বানিয়ে ফেলছে। কেউ নৌকার টেন্ডার পেলেই তিনি নির্বাচিত। গত ১০ বছরে স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে।
কিন্তু আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও বাকি পৌর ও উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনসহ বাকি ভোটও বর্জনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সংগ্রহীত: যুগান্তর
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ পুরনো নেতারাই নতুন মোড়কে নেতৃত্বে আসছেন। জানা গেছে, কারাবন্দি সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ প্রয়াত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে করা কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগই থাকছেন নতুন কমিটিতে। এরই মধ্যে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির খসড়াও করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে থেকেই যাদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির অভিযোগ ছিল, তারাই হেফাজতে পুনর্বাসন হচ্ছেন। এটি হলে সরকারকে ফের বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।’
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘১৬ আগস্ট সাব কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া করেছে। আমির এবং মহাসচিব ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর ঘোষণা দেওয়া হবে। এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হবে না।’
জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চের পর দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযানে গ্রেফতার হন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে একই বছরের ২৫ এপ্রিল সারা দেশের কমিটি বিলুপ্ত করেন তৎকালীন আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। সম্প্রতি একে একে জামিনে মুক্ত হন কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা। এরপর নতুন কমিটি গঠনের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ আগস্ট বৈঠকে বসেন নেতারা। ওই বৈঠকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে করা কমিটির নেতাদের সদস্য পদ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্বহাল করা হয়। এ ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী নেতাদের পদায়ন করতে মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের সাব কমিটি করা হয়। ওই সাব কমিটি ১৬ আগস্ট ঢাকার ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদে বৈঠকে বসে। সেখানে ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় খসড়া কমিটি তৈরি করা হয়।
ওই বৈঠকে বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী ও মাওলানা কাইয়ুম সোবহানীকে নায়েবে আমির করা হয়। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে করা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে সাংগঠনিক পদে পুনর্বহাল করা হয়। বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিসকে করা হয় যুগ্ম মহাসচিব। মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুফতি বশির উল্লাহকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পুনর্বহাল করা হয়। যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় মাওলানা হারুন ইজহার, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরীকে। সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় সহকারী যুগ্ম মহাসচিব। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হাটহাজারীর মাদরাসায় বৈঠক করে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৯৮৯ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ২৫৭৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আরও জানানো হয়, গত ১ দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২০৬১ জন করোনারোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন।