জীবন-মৃত্যুর মালিক, সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক, মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু কাজ মানুষের ওপর ফরজ করেছেন, যেসব কাজ সময়মত অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা কর্তব্য। আবার যদি সময়মত সেসব কাজ আদায় না করতে পারে, তবে সেটি পরবর্তীকালে যেকোন সময় আদায় করার যে সুযোগ থাকে, তাকেই আমরা সাধারণত কাযা বলি।
রমজানের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ওজরের কারনে রোজা না রাখলে পরবর্তীকালে আদায় করার নাম কাযা। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন: অন্য সময় এ সংখ্যা পূর্ণ করবে। [সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১৮৪]
একই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন: নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। অবশ্য তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। আর রমজানের রোজা যাকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়, তার কর্তব্য এর বদলে একজন মিসকিনকে খাবার দেওয়া। স্বত:স্ফূর্ত হয়ে কেউ সৎকাজ করলে তা তার পক্ষে ভালো। যদি তোমরা বুঝতে তবে সিয়াম পালনই তোমাদের জন্য অধিক কল্যানের হতো। [আল কুরআন, সূরা বাকারাহ]
একই সূরায় আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন: রমজান মাস। এ মাসেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন সৎপথের দিক নিদর্শন ও পার্থক্যকারীরুপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই সাওম পালন করে। আর যে রোগী বা মুসাফির, সে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তাই চান আর তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা চান না। উদ্দেশ্য যাতে তোমরা (নির্ধারিত দিনের সাওম) সংখ্যা পূরণ করতে পার আর তোমাদের সঠিক পথ প্রদর্শনের কারণে তোমরা আল্লহর মহিমা ঘোষণা করবে ও শুকরিয়া আদায় করবে। [আয়াত নং- ১৮৫]
রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ যাদের ওজর নেই তাদের প্রতি রমজানের রোজা সময়মত আদায় করা ফরজ করেছেন। আর যাদের অস্থায়ী ওজর আছে যেমন- সফর ও মাসিক তাদের প্রতি কাযা ফরজ করেছেন। আর যাদের স্থায়ী ওজর যার ফলে রোজা রাখতে পারে না তাদের জন্য আদায় ও কাযা কোনটাই না। যেমন: বয়স্ক এক্ষেত্রে বরং মিসকিনকে খাওয়াতে হবে।
হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ওপর রোজা রেখে মারা যায় অর্থাৎ সুযোগ থাকার পরেও কাযা আদায় না করে মারা যায় তবে তার পক্ষ থেকে অভিভাকগণ কাযা আদায় করে দেবে।
যেভাবে রোজার কাফফারা আদায় করা যায়:
প্রথম: দু’মাস একাধারে রোজা রাখতে হবে। কোনক্রমে যদি এই ৬০ দিনের মধ্যে একটি রোজাও ছুটে যায়, তবে আবার প্রথম থেকে ৬০ দিন পূর্ণ করতে হবে। পূ্র্বের দিনগুলোর রোজা কোন কাজে আসবে না।
উল্লেখ্য, কাফফারা আদায় করার সময় যাতে বছরের যে পাঁচদিন রোজা রাখা হারাম সেই দিনগুলো না পড়ে। আর স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে যদি কাফফারা আদায় করার সময় হায়েয উপস্থিত হয়, তবে হায়েযের সময়ের মধ্যে রোজা না রেখে পবিত্র হওয়া মাত্রই রোজা রাখা আরম্ভ করতে হবে।
দ্বিতীয়: রোজা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন মিসকিনকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি সহকারে এক বেলা আহার করাতে হবে।
খাবার খাওয়াতে সক্ষম না হলে এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। সেটি হলো- আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) এর নিকট এক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা). আমি হালাক তথা ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, কোন বস্তু তোমাকে ধ্বংস করেছে? লোকটি বলল, রমজানের রোজা রেখে স্ত্রী সঙ্গম করে ফেলেছি। মহানবী (সা.) বললেন, তুমি কোন দাস-দাসীকে মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখ? লোকটি না বলল, এবার রাসূল (সা.) বললেন, দু’মাস একাধারে রোজা রাখতে পারবে? সে না বলল।
এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, ষাট জন দরিদ্রকে খাওয়াতে পারবে?। এবারও লোকটি না বলল। এরপর আল্লাহর রাসূলের দরবারে লোকটি বসে রইলো। তারপর নবী করিম (সা.) এর কাছে একটি খেজুরের ঝুড়ি আসলে তিনি লোকটিকে এগুলো সদকা করে দিতে বললেন। এবার লোকটি বলল, আমার থেকে বেশি দরিদ্রকে কি দান করতে হবে? মদিনার দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকায় আমার থেকে বেশি অভাবী পরিবার আর নেই।
দোজাহানে বাদশাহ মহানবী (সা.) লোকটির এমন কথা শুনে জোরে হেসে ফেললেন, সেসময় আল্লাহর রাসূল (সা.) এর দাতগুলো প্রকাশ হয়ে পড়লো। তারপর আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, যাও এগুলো তোমার পরিবারকে গিয়ে খাওয়াও। [সহীহ বুখারী- হাদিস নং ১৯৩৬, সহীহ মুসলিম- হাদিস নং ১১১১, আবু দাউদ- হাদিস নং ২৩৯০, সুনানে নাসায়ী- ২১২]
আজকের বিষয়ের যবনিকায় এসে মহান প্রভুর কাছে একান্ত প্রার্থনা; হে সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক, আমাদেরকে রমজানের বাকি রোজাগুলোর পরিপূর্ণ হক আদায় করে রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।
মদিনার মসজিদে কুবার সাবেক ইমাম শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ জুরবান আল গামিদি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার (৭ আগস্ট) মসজিদে নববিতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে জান্নাতুল বাকিতে তাকে দাফন করা হয়।
বিখ্যাত কুবা মসজিদে ইমাম ও দায়ি হিসেবে অনেক বছর দায়িত্ব পালন করেন শায়খ মুহাম্মদ। পাশাপাশি তিনি মদিনার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। খুবই বিচক্ষণ ও গভীর জ্ঞানের অধিকারী একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সামাজিক কাজে নেতৃত্বচর্চার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আবেগঘন ভাষায় বক্তৃতা প্রদান করতেন তিনি।
তার মৃত্যুতে মসজিদে কুবার বর্তমান ইমাম অধ্যাপক ড. সুলাইমান বিন সলিমুল্লাহ আল রাহিলি এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমার প্রিয় গুরু ও শিক্ষক শায়খ মুহাম্মদ বিন জুরবান আল গামিদি মারা গেছেন। তিনি উচ্চমাধ্যমিক স্তরে আমাদের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন।’
ভোলার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নে চর ইসলাম, চর ফারুকীসহ বিভিন্ন চরে অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে প্রায় অর্ধশত মহিষ। এখনো প্রায় অর্ধশতাধিক আক্রান্ত আছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসব চরে গবাদিপশু রয়েছে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার।
স্থানীয় পশু চিকিৎসক সাঈদ সিকদার জানান, সর্দি, পেট ফোলা, মুখ দিয়ে লালা পড়া ও খাবারে অনীহা দেখা দেওয়ার ছয় থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহিষ মারা গেছে প্রায় ৫০টি । যাদের মহিষ মারা গেছে তারা হলেন—চরমানিকা ইউনিয়নের দক্ষিণ আইচা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বারেক হাওলাদারের ১টি, চরমানিকা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুল হাওলাদারের ৬টি, মিনাল রায়ের ৮টি, রবি হাজারীর ৩টি, তপন বিশ্বাসের ৪টি, আলমের ৪টি, কাঞ্চন মাতুব্বরের ৪টি, মুনসুর মুন্সীর ৮টি, দক্ষিণ চর আইচা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাশু সর্দারের ৩টিসহ প্রায় ৫০টি মহিষ অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে।
এরা নদী শিকস্তি পরিবার। মনপুরা ও তজুমদ্দিন এবং চরফ্যাশনের মূল ভূখণ্ড থেকে নদীভাঙনের শিকার হয়ে নতুন করে বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন এরা এসব চরে। এ আকস্মিক ও ভয়ানক দুর্যোগ তাদের স্বপ্নকে বিলীন করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান জানান, এখনো মহিষ মারা যাওয়ার কারণ আমরা শনাক্ত করতে পারেনি, তবে আমাদের পরীক্ষানিরীক্ষা চলমান আছে।
ভোলা জেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন মহিষ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বলেন , যে সমস্ত মহিষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি সেগুলো হয়তো মারা যাচ্ছে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে। তিনি এ ব্যাপারে মহিষ মালিকেরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।