হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বহুল আলোচিত জালিয়াতির হোতা, প্রতারক আক্কল আলী ইতিমধ্যে মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন কয়েকবার।
অভিনব কায়দায় জাল জালিয়াতি আর প্রতারণা করে সামান্য কেয়ার টেকার থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া আক্কল আলী এবার পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলে চারিদিকে শুরু হয়েছে কানাঘুষা! বিভিন্ন প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং আত্মসাতের ঘটনায় টিভি ও পত্র পত্রিকার শিরোনাম হওয়ায় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ আক্কল আলী সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে কিভাবে মঞ্চে স্থান পায় এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এর নিউজে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল। যা অবাক করে স্বদেশ ও প্রবাসের জনসাধারণকে।
একজন প্রবাসীর সারাজীবনের কষ্টে অর্জিত সম্পদের মালিক হয়ে গেলেন জালিয়াতি করে আক্কল আলী!
প্রতারণার শিকার জগদল গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ জাকারিয়ার সাক্ষাৎকারে ও জগদল গ্রামের প্রবীন মুরুব্বীদের তথ্য মতে বেরিয়ে আসে আক্কল আলী ওরফে শাহ আক্কল আলীর জমি ও ভূমি দখলের আসল চিত্র। যাহা আপনারা দেখেছিলেন যুমনা টেলিভিশনের প্রতিবদনে।
আক্কল আলীর বাড়ীর প্রবীণ মুরুব্বী আক্কল আলীর চাচা’র সাক্ষাৎকারে প্রবাসী পরিবারের সাথে আক্কল আলীর প্রথম সম্পর্ক ও তাদের সরল বিশ্বাসের সুযোগে জালিয়াতি ও প্রতারণা করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার কথা বেড়িয়ে আসে। আক্কল আলীর পিতা জগদল ফকির বাড়ীর শাহ তফজ্জুল আলী তিনি পরিবার ও ছেলে মেয়েদের ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করতেন। তার দাদা শাহ জহির আলী আক্কল আলীর ভাই বোনদের বের করে দেন বাড়ী থেকে। আক্কল আলী আর্থিক অভাবে অন্যত্রও চাকরি করতেন। লন্ডন প্রবাসী জাকারিয়ার পিতা শাহ মোহাম্মদ আলী দয়ালু হয়ে আক্কল আলীকে আশ্রয় দেন তার বাড়ীতে।
আক্কল আলী প্রথমে শাহ মোহাম্মদ আলী’র পরিবারের বিভিন্ন বিষয়াবলী সততার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও সুযোগ বুঝে সম্পত্তি গ্রাস করতে জাল কাগজ সৃজন করে দখল করেন একাধিক মূল্যবান স্থাপনা ও ভিটেমাটি এমন কি তার দখল থেকে বাদ যায়নি কবরস্থানের জায়গাজমিও।
লন্ডন প্রবাসী শাহ জাকারিয়া জানান, ১৯৮৮ সালে আমার পিতা শাহ মোহাম্মদ আলী আমার নামে জগদল গ্রামে ও দিরাই পৌরসভায় দুটি বিল্ডিং নির্মাণ করেন ও আমার মায়ের নামের বাসাটিকে ভূয়া দলিলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে দখল করেন আক্কল আলী। আমার পিতা মরহুম শাহ মোহাম্মদ আলী মারা যাওয়ার পর থেকে আক্কল আলী আমাদের অর্জিত সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে মরিয়া ঊঠেন। এবং আস্তে তিনি আমাদের সব কিছু জাল দলিলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
আক্কল আলী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা ও ভূমি দখলের পাশাপাশি অবৈধ হোন্ডি ব্যবসাসহ অনেক অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িত আছেন আক্কেল আলী। তার জালিয়াতি থেকে রক্ষা পায়নি তার সৎ ভাই-বোনেরাও। আক্কল আলীর পিতার ১২ কেদারা জমিন ছিলো, সৎ ভাইদেরকে এ জমি থেকে বঞ্চিত করতে আক্কল আলীর মা জগত মালার নামে ৬ কেদারা জমি রেকর্ড করেন।
আক্কল আলীর প্রতারণার আরেক শিকার আবুল হাসান শরীফ, দিরাই উপজেলা রোডের দোকান কোটা ভাড়া নিয়ে এক বছরের ভাড়া না দিয়ে মালিক পক্ষের অনেক মালামাল নিয়ে দোকান মালিকের অনুপস্থিতিতে অন্যত্র সটকে পড়ে, এটা নিয়েও চলে দেনদরবার।
প্রতারণার শিকার শাহ জাকারিয়া সহ আবুল হাসান শরীফ জালিয়াতির হোতা, প্রতারক ও অন্যের সম্পত্তির দখলকারীর আক্কল আলীর বিচার চান।
আক্কল আলীকে গত ২০ ফেব্রুয়ারী জগদল হাসপাতাল উদ্বোধন পরবর্তী জনসভার মঞ্চে ক্লিন ইমেজের পরিকল্পনা মন্ত্রী উন্নয়নের রুপকার আলহাজ্ব এম এ মান্নান এর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে এলাকার বিভিন্ন হাট -বাজারে বইছে সমালোচনার ঝড়। জগদল গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান আক্কল আলীর এই সমস্ত কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের অপকর্ম আড়াল করতে মহতি একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে অযাচিত ভাবে দাঁড়িয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রমাণ করার অসার চেষ্টা করেছেন কিন্তু এলাকার মানুষজন উনাকে বয়কট করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শাহ জাকারিয়া নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থে ও শ্রমে ঘামে তিলে তিলে গড়ে তোলা আবাসিক হোটেল, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, জায়গায় জমি উদ্ধারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশিল সমাজ, মিডিয়া ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে প্রতারক আক্কল আলীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
একুশে সংবাদ/না.তা/আ
আপনার মতামত লিখুন :