ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। বিদ্যাপিঠটি ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। একুশ শতকের উপযোগী বিশ্বমানের গ্রাজুয়েট ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ভিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। নিরবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপিঠ। নানা চাড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ৪২ বছরে পদার্পণ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিদ্যাপিঠটির এই দীর্ঘ পথ চলা মসৃণ ছিলনা। ভিবিন্ন আন্দোলন কোন্দলে কোন প্রশাসনই শান্তিপূর্ণভাবে মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। সেই অসাধ্যকে সাধন করেছে সদ্য বিদায়ী প্রশাসন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ পূর্ণ করলেন। গত ২০ আগস্ট উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ পদের মেয়াদ ৪ বছর পূর্ণ হয়। ৪০দিনের মাথায় নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলেও এখন পর্যন্ত শূন্য রয়েছে কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইবির নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের (অবসরপ্রাপ্ত) ড. অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম। কোষাধ্যক্ষ শূন্য পদটির ছয় মাস পূর্ন হলো। কবে নাগাদ নিয়োগ দেওয়া হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। কবে ফিরবে প্রশাসনে গতিশীলতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম এই পদটি শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কর্মকান্ডসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। উপাচার্য নির্বাহী ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক কাজ পরিচালনা করলেও কিছু কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে দশটি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলমান। কাজগুলো বাস্তবায়নে নয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। চলমান প্রকল্পে প্রায় আটশত নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ভিজিলেন্ট টিমের প্রধান হিসেবে তার সুপারিশ ছাড়া কোন বিল হয় না। পাচঁ মাস যাবৎ ঠিকাদাররা ঠিকমতো বিল না পাওয়ায় তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে চলমান উন্নয়নমূলক কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হল ও ভবন সংস্কার কাজে ইতোমধ্যে ১০টি লোকাল টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির প্রধানের অনুমোদন ছাড়া এসব কাজ শুরু হয় না। আর এ কমিটির প্রধান হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী সহিদ উদ্দীন মোঃ তারেক বলেন, শূন্য পদটি অতী দ্রুত পূরণ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়র জন্য জরুরী। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় চলে আসবে গতিশীলতা। চলমান উন্নয়ন কাজ এগিয়ে যাবে দ্রুত গতিতে।
কোষাধ্যক্ষ শূন্যপদে নিয়োগ পেতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রফেসররা। কে হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কোষাধ্যক্ষ তা নিয়ে নানা গুঞ্জন, জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে। আলোচিত প্রফেসরবৃন্দ হচ্ছেন প্রফেসর ড. মুঈদ রহমান, প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, প্রফেসর ড. কাজী আখাতার হোসেন, প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান, প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ড. তপন কুমার জোদ্দার, প্রফেসর শাহজাহান মন্ডল, প্রফেসর ড. মাবুবুল আরেফিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কয়েকজন শিক্ষক এ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
এরমধ্যে আলোচনায় তিন জন অধ্যাপকের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। আলোচিত তিন শিক্ষকের নাম ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলোমগীর হোসেন ভূঁইয়া, একই বিভাগের অধ্যাপক মুঈদ রহমান এবং হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী আখতার হোসেন।
সাংগঠনিক, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক, ক্লিন ইমেজের দিক থেকে প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। অধ্যাপক কাজী আখতার হোসেন বর্তমানে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শাপলা ফোরামের কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুই কমিটিতে সহ-সভাপতি ও বর্তমানে নির্বাচিত কমিটির সিনিয়র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
বাসদ সমর্থিত অধ্যাপক মুঈদ রহমান শাপলা ফোরামের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক আলমগীর হোসেন এর আগে প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্র ঘোষিত একাংশের কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার মুঃ আতাউর রহমান বলেন, কোষাধ্যক্ষ বিহীন বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হলে রেজিস্টার ও ভিসি অফিসে চাপ পরে বেশি। কারন, কোষাধ্যক্ষ অফিসের সমস্ত কিছু দেখভাল করতে হয় রেজিস্টার ও ভিসি অফিসে। আশা করি সরকার দ্রুত আমাদের কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্নাঙ্গ প্রশাসন উপহার দিবেন।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেষ আব্দুস সালাম সারাবংলাকে বলেন, ‘কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। সরকার যখন চাইবে তখন পদটিতে নিয়োগ দেবে। এতে আমার কিছু করার নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরিভাবে গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে পদায়ন জরুরি।’
উল্লেখ্য যে, ইবি উপ-উপাচার্যের মেয়াদও দু'মাসের মধ্যেই শেষ হতে চলছে।
একুশে সংবাদ/প.সি/আ
আপনার মতামত লিখুন :