ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১, ২ চৈত্র ১৪২৭

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
Janata Bank
Rupalibank

ইজারার নামে অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে জনবসতি 


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ 
০৫:০২ পিএম, ৫ মার্চ, ২০২১
ইজারার নামে অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে জনবসতি 

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সরকারি ইজারার নামে মহানন্দা নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন ও গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-পলশা গ্রামে। 

গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেও ভুয়া ইজারার কথা বলে জনবসতির ধারেই মহানন্দা নদীর কিনারা হতে মাত্র ৫০ গজ দূর হতেই চলছে বালু উত্তোলন। যেটি বৈধ ইজারার সীমানার বাইরে গিয়ে নিয়ম বর্হিভূত। নদীর এতো কাছ থেকে বালু উত্তোলনে নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পলশা উচ্চ বিদ্যালয়, জেলেপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পলশা-মহেশপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সেচ প্রকল্পসহ এই দুই গ্রামের নদীপাড়ের বাসিন্দারা। 

গ্রামবাসীর অভিযোগ, বালিয়াডাঙ্গা-শ্রীরামপুর বালুমহলটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা নিয়ে এর সীমানার বাইরে গিয়ে চলছে এসব অবৈধ বালু উত্তোলন। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি এই অবৈধ বালু উত্তোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ইজারা সীমানার বাইরে হলেও ভাড়া নিয়ে এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের অনুমোদন দিচ্ছে বালিয়াডাঙ্গা-শ্রীরামপুর বালু মহলের ইজারাদার মো. বাদল ও তার সহযোগী কৃষকলীগ নেতা রুহুল আমিন ।

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা-চকঝগড়ু ঘাট থেকে গোবরাতলা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক চাঁপাই জামে মসজিদ পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যেই অন্তত ৫টি স্থায়ী-অস্থায়ী বালুর পয়েন্টে তোলা হচ্ছে এসব অবৈধ বালু। পলশা-চকঝগড়ু ঘাট সংলগ্ন উত্তর পাশে গতবছর বালু উত্তোলনের কারনে নদীর কিনারা হতে মাত্র ৫০ গজের কম দূরত্বে যেখানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো, ঠিক সেখান থেকেই এবছর আবারো পাহাড়সম বালু তুলেছে পলশা মধ্যপাড়া গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. জুয়েল ও সবুর আলী। এর কয়েক গজ উত্তরে গত কয়েকদিন থেকে বালু তুলছে পলশা গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান ও চকঝগড়ু গ্রামের হুমায়নের ছেলে জুয়েল রানা কালু। টানা দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের ফলে পলশা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিচে নদীর ধারে সম্প্রতি বড় কয়েকটি জায়গা নিয়ে বড় ধস হয়েছে।

অবৈধ বালু উত্তোলনকারী জুয়েল রানা কালু বলেন, আমরা বালিয়াডাঙ্গা-শ্রীরামপুর বালু মহলের ইজারাদারদের থেকে ভাড়া নিয়ে এসব বালু উত্তোলন করছি। বৈধ-অবৈধ এসব জানার দরকার নেয় আমাদের। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, পলশা ঈদগাহের পাশে বিদুৎ সংযোগ পারাপারের যে টাওয়ার রয়েছে তার নিচে নদী হতে এবছর বালু উত্তোলন করেছেন, পলশা উত্তরপাড়া গ্রামের আজিজুল মাস্টারের ছেলে মো. মামুন, বালিয়াডাঙ্গার মো. আইনুল ইসলাম ও লালবাবু। 

টাওয়ারের উত্তরে একটি এবং সাবরেজিস্টার মনিরুলের বাড়ির পাশে আরো একটি বালু পয়েন্ট থেকে বালু তোলা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই দুই বালু পয়েন্টের মালিক পলশা উত্তরপাড়া গ্রামের আজিজুল মাস্টারের ছেলে মো. মামুন, পলশা মিশনের তাইবুর রহমান, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ১,২,৩ নং ওয়ার্ড সদস্য বেদানা বেগমের স্বামী আমিরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। 

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে এই এলাকার বৈধ ইজারা নিয়ে ইজারাদারদের ম্যানেজ করে নিদিষ্ট সীমানার বাইরে গিয়ে এভাবেই এই এলাকায় বালু উত্তোলন চলছে। এনিয়ে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তবুও মিলছে না কোন সমাধান।

পলশা-জেলেপাড়া গ্রামের শ্রী বলাই ঘোষ বলেন, কয়েক মাস আগে থেকেই নদী থেকে বালু উঠাচ্ছে। এসব মূলত বালিয়াডাঙ্গার নাকফোঁড় নামক ব্যক্তি উঠাইছে। 

খাইরুলের স্ত্রী সাগিরা বেগম বলেন, আমি খুবই অসুস্থ৷ মেশিনের শব্দে প্রচন্ড বুক ধরফর করে। তাই বাড়ির এতোকাছে মেশিন চালাতে মানা করলে আমাদেরকে প্রশাসনের কাছে যেতে বলছে। আমরা কোন প্রশাসন চিনি না আর এসব বুঝিও না। একজন মহিলা জানান, কয়েক বছর আগে এখনে বালু উঠার কারণে বড় বড় কয়েকটি শিমুল গাছ ধসে বিলিন হয়েছে মহানন্দায়। 

শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদ জানায়, গ্রামবাসী নিষেধ করলেও শুনে না। এটি চলতে থাকলে এখানকার সমস্ত বাড়িঘর নদীর ভাঙনে বিলীন হবে। চকঝগড়ু গ্রামের মো. হামিম কাজ করেন নবাব অটো রাইস মিলে। কাজের সুবাদে প্রতিদিনই পলশা-চকঝগড়ু ঘাট পারাপার হয়ে কাজে যেতে হয় হামিমকে। তিনি জানান, এখানে দীর্ঘদিন দিন থেকে এই ঘাটের পাশেই ড্রেজার লাগিয়ে সরাসরি নদী হতে বালু তোলা হয়। 

বালিয়াডাঙ্গা-শ্রীরামপুর বালু মহলের ইজারাদার বাদল সীমানার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে দেয়া বালুমহলের নিদিষ্ট সীমানার মধ্যে বালু পাওয়া যায় না, তাই একটি বাইরে তোলা হচ্ছে। 

এবিষয়ে ইউপি সদস্য ফজলে রাব্বি রেনু বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ গ্রামবাসীর সাক্ষর নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেও কোন সমাধান পায়নি। এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যকে বারবার বলেও এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রভাবশালীদের কারনে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

মুঠোফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান জানান, এর আগেও চাঁপাই-পলশা গ্রামে ইজারা এলাকার বাইরে গিয়ে মহানন্দায় অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা মিলেছে। যেহেতু ইজারাগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে হয়, তাই সেই কমিটিকে এই তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।


একুশে সংবাদ/ আ.ওয়া /এস