বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান ২০১৮ সালের ১২ই মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় । ওই ঘটনায় শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের মৃত সরাফত আলীর ছেলে ফারুক আহম্মেদ প্রিয়ক ও তার মেয়ে তাম্মারা প্রিয়ংমনি নিহত হন। প্রিয়কের মা ফিরুজা বেগম নগরহাওলা গ্রামে নিহতদের নামে মসজিদ নির্মাণ করেছে। ২০২১ সালের ১২ মার্চ শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে ওই মসজিদ শুভ উদ্ধোধন করা হবে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষেই জৈনাবাজারের দৃষ্টিনন্দন দোতলা বাড়ি। বাড়িটি ঘিরে এক সময় প্রাণের সঞ্চার থাকলেও এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। বাড়িটি জনাকীর্ণ এলাকায় হলেও নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় ছেলে ও নাতনির মৃত্যুর পর তাদের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে একাকী বাস করছেন ফারুক আহম্মেদ প্রিয়কের মা। বৃদ্ধ বয়সে হারানো স্মৃতিগুলোই তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ফারুক আহম্মেদ প্রিয়ক ও তার একমাত্র সন্তান তামাররা প্রিয়ংময়ী । আজ ১২ মার্চ ২০২১ সাল প্রিয়া ও তার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার তিন বছর । ফারুকের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী অন্যের ঘরে সংসারী হয়ে চলে গেছেন।
কিন্তু নিজ সন্তান ও নাতনির স্মৃতি বুকে আগলে রেখেছেন পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য ফিরোজা বেগম। নগর হাওলা গ্রামে বায়তুল নূর ফারুকিয়া জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করে রেখেছে ফরুকের মা ফিরুজা বেগম। আজ ১২ মার্চ মসজিদটি শুভ উদ্ধোধন করা হবে।
ফারুকের মা ফিরোজা বেগম জানান, প্রিয়কের ইচ্ছা ছিল খুব সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করবে। মসজিদের পাশেই থাকবে মাদরাসা ও এতিমখানা। এখন প্রিয়ক নেই, তাই ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই তার শেষ বয়সের একমাত্র ইচ্ছা।
তিনি জানান, মসজিদের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, ভেতরে সাজ সজ্জার কাজ শেষ। ১২ মার্চ উদ্ধোধন। রমজানে মসজিদে নামাজ শুরু হবে। স্বামী, সন্তান, নাতনি ও নিজের নামেই মসজিদের নামকরণ হবে। পাশাপাশি মাদরাসা ও এতিমখানা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ছেলে-নাতনীর মৃত্যুর কিছু দিন পরই ছেলের বউ অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করতেছে। এর আগে প্রিয়কের বাবার রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়কের স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও কিছু ভাগ বাটোয়ারা বাকি আছে।
ফিরোজা বেগম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনকে বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। স্বামী মারা যাবার পর একমাত্র সন্তান প্রিয়কই ছিল তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। সে চলে গিয়ে শূন্য করে দিয়ে গেল সব। তার পরিবারে এখন কেউ না থাকায় পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের ঘিরেই সময় কাটে। অবসরে ছেলে ও নাতনির কথা শুধু মনে পড়ে। তাদের রেখে যাওয়া স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। নাতনির খেলনা, ছেলের পোশাক, ক্যামেরা, দেয়াল জুড়ে লাগানো ছবিই বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগাচ্ছে। নামাজ পড়ি আর আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করি।
একুশে সংবাদ/এসএম
আপনার মতামত লিখুন :