ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী ফজল মিয়া (৪৫), তার বাবা-মা মারা গেছেন কয়েক বছর আগেই। এতদিন নিজের বসতভিটায় ঠাঁই হলে এখন তার আপন ৩ ভাই মিলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলা শহরের পশ্চিম মেড্ডা মৌ-বাগ এলাকার মৃত লাল মিয়ার চার ছেলে। বাকপ্রতিবন্ধী ফজল দীর্ঘদিন ধরে তাদের পৈতৃক ভিটাতে বসবাস করে আসছিলেন। বাকপ্রতিবন্ধী ফজল মিয়া ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। তার অপর ৩ ভাই যোগসাজশে বিভিন্নভাবে তাকে পৈতৃক ভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। সম্প্রতি তার জায়গায় কৌশলে তাকে না জানিয়ে বিল্ডিং নির্মাণের চেষ্টা চালায়। এতে তিনি রাজি না হলে তাকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেন। ফজল তার বসতভিটায় গেলেই মারধর করে বের করে দেন তার ভাইয়েরা। তিনি তার প্রতিবেশীদের সাহায্য চাইলে অনেকেই এগিয়ে এলেও কাউকেই তোয়াক্কা করেন না তার ভাইয়েরা।
বাকপ্রতিবন্ধী ফজল মিয়া বলেন, আমার তিন ভাই, তারা আমার জায়গা দখল করে বাড়ি বানাচ্ছেন। আমি বাধা দিলেই আমাকে সবাই মিলে মারধর করেন। প্রাণের ভয়ে আমি বাড়িতেও যেতে পারছি না। আমার স্ত্রী—সন্তান না থাকায় এই সুযোগে তারা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছেন। আমাকে রক্ষা করতে প্রতিবেশীরা এগোলেও কাউকেই তারা মানছেন না। আমি আমার বাবার দেওয়া জমি ফিরে পেতে প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফজলের প্রতিবেশীরা বলেন, আমরা সবাই মিলে অনেকবার চেষ্টা করেছি তার জমি ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু তার ভাইদের কাছে গেলেই আমাদের দেখে ক্ষ্যাপে ওঠেন ও বকাবাজি করে তাড়িয়ে দেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তার ভাই গফুর মিয়া বলেন, তার জায়গা দখল করিনি, আমরা তাকে থাকার জন্যই পৈতৃক জমিতে বিল্ডিং নির্মাণ করছি। ফজল বিচারের আশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত প্রাঙ্গণে সামনে বসে আছেন। বুঝতে পারছেন না কি করবেন।
এদিক-সেদিক তাকিয়ে অঝরের চোখে জল ফেলছেন। পরে তার আইনি সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত। এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফজলের দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আসহাব উদ্দিন ঘটনাস্থলে যান। পরে তিনি জমি নিয়ে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি নির্মাণ বন্ধ রাখতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সকালে বাকপ্রতিবন্ধী ফজল মিয়া আমার অফিসে এসেছিলেন। আমি তাকে আইনি সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পরবর্তীতে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও ইউএনও জানান।
একুশে সংবাদ/এ/আ
আপনার মতামত লিখুন :