চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কাটাপোল গ্রামে ইটভাটার মাটি টানা ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে মঈদুল নামে একজন বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এঘটনায় পরিদর্শনে গেলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর হামলার শিকারে পরিণত হয়েছেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন, হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল হক বিশ্বাস এবং জীবননগর ভুমি অফিসের সার্ভয়ার ইকতিয়ার হোসেন।
বেলা সোয়া ১ টার সময় আহত অবস্থায় ইউএনওকে উদ্ধার করে জীবননগর থানা পুলিশ। উদ্ধারের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে এনে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিনা আখতার সুমি।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
এলাকাবাসী জানান, কাটাপোল গ্রামের মাঠ হতে মাটি ও বালি উত্তোলন করে দেদারছে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি মহল। এ মাটি নেওয়াকালে প্রতিদিনি অর্ধশত ট্রাক্টর ওই রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গততিতে চলাচল করে। এ নিয়ে এলাকাবাসী চরম বিক্ষুদ্ধ ছিলেন। এর প্রতিকার চেয়ে গ্রামবাসী প্রশাসনের নিকট আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন ৪ দিন আগে ২ জন ট্রাকটর চালককে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ অবস্থার মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শংকরহুদা-বাথানগাছি গ্রামের মঈদুল ইসলাম (৩৪) তার ৭ বছরের শিশু সন্তান রাসেলকে নিয়ে বাইসাইকেলযোগে শ্বশুরবাড়ি জীবননগর উপজেলার নতুন চাকলা গ্রামে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কাটাপোল গ্রামে দক্ষিণ পাড়ায় তারা পৌছালে ট্রাক্টরের ধাক্কায় পিতা-পুত্র আহক হয়। দুর্ঘটনায় মঈদুলের মাথার ঘিলু বাহির হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরেই মঈদুল ইসলামের মৃত্যু হয়। ছেলে রাসেলের হাত-পা ভেঙ্গে যায়। তাকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী সড়ক অবরোধ করে রাখে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাবার পর গাড়ী থেকে নামার সাথে সাথে দু'শতাধিক লোক তাকে ঘিরে ধরেন। এসয় বিক্ষুদ্ধ জনতা তার ওপর হামলা চালায়। এসময় তিনি প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড় দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন ইউএনওকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় একটা ইট তার মাথায় লাগে মাথা থেকে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে তিনি পার্শবর্তী জমির উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজনও ওই বাড়িতেও হামলা চালায়। খবর পেয়ে জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে দিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করেন এবং অবরুদ্ধ থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কৌশলে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নেন।
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান জানান, তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তিন শতাধিক মানুষ ইউএনওকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন খুবই উত্তেজিত ছিলো। আমি কৌশলে ইউএনওকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে আসি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ঘটনাস্থলে পৌছানোর ৫ মিনিট আগে আমি ওখানে পৌছায়। আমি বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এসময় ইউএনও মহোদয় গাড়ি থেকে নামার পরই উত্তেজিত লোকজন তাঁর উপর হামলা চালান।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিনা আখতার সুমি জানান, ইটের আঘাতে ইউএনও মহোদয়ের মাথায় আঘাত লেগেছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের অনেকেই জানান, কাটাপোল গ্রামের শাখাওয়াতসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র বেশ কিছু দিন থেকে এলাকার বিভিন্ন জমি হতে মাটি কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করে আসছিলো। প্রতিদিন ৫০-৬০ টি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে মাটি আনা-নেওয়া করতো। এতে ওই এলাকার লোকজন চরম ক্ষুব্ধ ছিলো।
একুশে সংবাদ / আ.ল / এস
আপনার মতামত লিখুন :